ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেড়েছে ভিড় কাটেনি দুঃস্বপ্ন

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ

টানা দুইদিনের সংঘর্ষের ক্ষত কাটিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরেছে নিউমার্কেটসহ এর আশপাশের মার্কেটগুলো। ক্রেতাসমাগমে জমে উঠেছে প্রতিটি দোকান। ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। বিকিকিনিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনিচক ও নুরজাহান মার্কেটে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, সকাল থেকেই দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতেও নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে চান তারা। ক্রেতারা বলছেন, সবার মনেই একটা আতঙ্ক কাজ করেছিলো, এবার নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা করতে পারবেন কিনা। তবে এখন সে আতঙ্ক কেটে গেছে। এখন তারা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারছেন।

সরজমিনে নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মার্কেটের সব দোকানই খুলেছে। সবখানেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কোনো কোনো দোকানে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতিও নেই। এক দোকানকর্মীর বিপরীতে ক্রেতা রয়েছেন চার থেকে পাঁচজন। রাস্তার পাশের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। ঢাকা কলেজের গেটের সামনেও দোকান বসিয়েছেন অনেকে। পুরো কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘিরেও বসেছে অসংখ্য দোকান। তবে এসব দোকানে তুলনামূলক বেচাকেনা কিছুটা কম।

আকাশ নামে এক ক্রেতা বলেন, গত বুধবার কেনাকাটা করতে এসে ফিরে গেছি। নিউমার্কেট বন্ধ ছিল। এরপর কেনাকাটা করার প্রয়োজন থাকলেও নিউমার্কেটে আসবো আসবো করে আসা হয়নি। সকালে খবরে দেখলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে তাই আবার কেনাকাটা করতে এসেছি। কেনাকাটা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবো।

শরিফ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, পরিবারের সবার জন্য পোশাক কেনার অপেক্ষায় ছিলাম। চিন্তায় ছিলাম মার্কেট খুলবে কিনা। কারণ আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের একমাত্র ভরসার জায়গা নিউমার্কেট। অল্প টাকায় ঘুরে ঘুরে এখান থেকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ভালো লাগছে। কোনাকাটা করতে পারছি এটা আসলেই অনেক আনন্দের।

এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আতঙ্ক নিয়ে সকালে দোকান খুলেছি। কেনাবেচা শুরু হয়েছে। লোকজনের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে এখনো ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আগের মতো আমরাও বেচাকেনায় মনোযোগী হতে পারবো বলে আশা করছি। বিগত দিনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সবাই।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অলোক পাঠান বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি আতঙ্কে ছিল। তাই অনেকেই দোকান খোলেননি। তবে আজ (গতকাল) সকালে ভয় কাটিয়ে দোকন খুলেছে সবাই। ক্রেতাসমাগমও বেড়েছে। বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে।

এর আগে সোমবার রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেদিন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষ থামলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার শুরু হয়ে। সংঘর্ষের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত মিরপুর সড়কে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার দিনব্যাপী সংঘর্ষ চলে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার সারাদিন ধরে নিউমার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট বন্ধ ছিল। বুধবার কয়েকটি মার্কেটের দোকানপাট খুললেও নিউমার্কেটের কোনো দোকান খোলেনি। এদিন বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা কলেজের কাছে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের পর পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়। শিক্ষার্থীদের একটি দল আবার রাস্তায় নেমে আসে। পরে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় সমঝোতা হয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন