- প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শেষ প্রান্তে
- সৈয়দপুরে পাইপ লাইনে গ্যাস আসছে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে
করোনার সংকট কাটিয়ে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামি বছরের জুলাই মাসে পাইপ লাইনে গ্যাস পাবে নীলফামারীর সৈয়দপুরবাসী। এ লক্ষ্য পূরণে সৈয়দপুর অংশের ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হওয়ায় শিল্প কারখানা স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এ মেগা প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের সঞ্চালন লাইন বসানো হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পাইপ লাইনের রুটম্যাপ অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা জমিতে সঞ্চালন লাইন পাইপ, ইন্ডাকশন বেন্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিছানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাইন জোড়া লাগানোসহ ভূমি উন্নয়নের কাজ করছে। পাইপ লাইনের শেষ প্রান্ত সৈয়দপুর শহরের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন জায়গায় ¯’াপন করা হ”েছ সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ¬াই (সিজিএস) স্টেশন। সূত্র মতে, সৈয়দপুর অংশের ৬ কিলোমিটার পাইপ লাইন ও সাপ¬াই স্টেশন নির্মাণের জন্য ৪৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ একর পাইপ লাইনের এবং ৩ একর সাপ¬াই স্টেশন স্থাপনের জমি রয়েছে। পাইপ লাইন বসানোর জন্য ২৪ ফুট প্রশস্তের জায়গায় মাটির ৮ ফুট গভীর পাইপ বসানো হচ্ছে। সরেজমিনে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের চিকলী পাইপ লাইন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধান ক্ষেতের বুক চিরে বসানো হচ্ছে সঞ্চালন পাইপ। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ভারী যানবাহনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। ক্ষেতের উঁচু নিচু জমি সমতল করে ভূমি উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাইপ জোড়া লাগাতে চলছে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ। প্রকল্পের এলাকা জুড়ে চলছে শ্রমিক-কারিগর ও প্রকৌশলীদের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
এ ব্যাপারে পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক খন্দকার আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, করোনা মহামারীর কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন দ্রুততার সঙ্গে চলছে গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এ পাইপ লাইন চালু হলে সৈয়দপুর-রংপুর অঞ্চলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ¯’াপন, শিল্পায়ন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্পটিতে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে সরকার ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড। নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি ছিল উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। এতদিন উত্তরাঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্প-কারখানার বিস্তার থমকে আছে। আবার সচল অনেক শিল্প-কারখানা রুগ্ন দশায় পরিণত হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ হলে শিল্প-কারখানা যেমন বাঁচবে, তেমনি গড়ে উঠবে নতুন নতুন কল কারখানা। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে এবং মানুষের বেকারত্ব দূর হবে। তিনি সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করারও তাগিদ দেন।
সৈয়দপুরে আমিনুল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এ অঞ্চলে গ্যাসের সুবিধা না থাকায় অনেকে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে পারছে না। তবে পাইপ লাইনে গ্যাস আসার কাজ এগিয়ে যাওয়ায় আমরা নতুন শিল্প স্থাপনের স্বপ্ন দেখছি। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। এর জন্য সরকারকেও শিল্প-কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। উল্লেখ্য, অবহেলিত উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্প-কারখানা প্রসারে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের এক জনসভায় গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেকের এক সভায় বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপরই পেট্রোবাংলার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে।