রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দরিদ্র ভূমিহীন দুই বৃদ্ধার দোকানের পুঁজি ১০০ টাকা

জরাজীর্ণ শরীরে বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী। অভাব অনটন আর ক্ষুধার যন্ত্রনা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। একবার খেলে আরেক বেলার খাবার কপালে জুটবে কিনা, তা নিয়ে দুঃচিন্তায় থাকতে হয়। অভাবের চাকায় নিত্যদিন পৃষ্ঠ হলেও ভিক্ষার হাত না পেতে বেছে নিয়েছেন জীবন সংগ্রাম। এমনই অভাবী সংগ্রামী স্বামী-স্ত্রীর খুঁজ মিলেছে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার শেষ প্রান্তে জালালপুর ইউনিয়নের চরনোয়াকান্দি গ্রামের বেরিবাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। এরা হলেন মো. শামসু মিয়া(৯০) ও জহুরা খাতুন (৭০)।

জনা যায়, শুরুতে সামান্য ভিটে থাকলেও ত্রিশ বছর আগে নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তারা। এরপর থেকে কখনও ভাসমান জীবন আবার অন্যের জমিতে ঝোপড়ি ঘর বেধে থাকছেন ভূমিহীন দুই বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী। অন্যের জায়গায় বাঁশ বেত দিয়ে বেধেছেন ঝোপড়ি দোকান। পুঁজিমাত্র তাদের ১০০ টাকা। অবিশ^াস্য হলেও এ পুঁজি দিয়ে শুরু থেকে দোকান পরিচালনা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কটিয়াদী-মনোহরদী চরমান্দালিয়া ব্রীজ সংলগ্ন চার রাস্তার মোড়ে একটি ঝোপড়ি দোকান। এতে বসে আছেন দুই বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী। দোকানে দেখা যায়, সামান্য কিছু খাদ্যদ্রব্য। এর সর্বোচ্চ মূল্য ১০০-১৫০ টাকা হতে পারে।

এ সময় কথা হয় পাশের কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে, তাদের মধ্যে চরমান্দালিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীন, আকাশ আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘বৃদ্ধা শামসু তার স্ত্রীকে নিয়ে খুবই অভাব অনটনে তাদের বাচঁতে হচ্ছে। তাদের কোনো থাকার মত নিজস্ব জায়গা জমি নেই। কর্মহীন এক ছেলে থাকলেও পিতা মাতার দেখাশোনা করেনা। তদের খাদ্যদ্রব্যসহ সংসার চালানোর মত সহায়তা করার দাবি জানাচ্ছি আমরা এলাকাবাসী।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় সাহেদের বাবার মৃত্যু, দেখতে আসেনি ছেলে

বৃদ্ধা শামসু বলেন, একবেলা খাবার কপালে জুটলেও আরেক বেলার খাবার জুটেনা। নিজের কাছে দুইশত টাকা শেষ সম্বল ছিল, সেই টাকা দিয়ে দোকানে কিছু মালামাল তুলেছিলাম। এতে যে টাকা বিক্রি হয় তা দিয়ে একবেলা খাবার হয়না। কারো কাছে হাত না পেতে আমরা স্বামী-স্ত্রী বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।

বৃদ্ধের স্ত্রী জহুরা খাতুন বলেন, রোজার মাঝেও অভাবে না খেয়ে রোজা থাকতে হয়েছে। অনেকবার আলু সিদ্ধ করে ইফতার ও সেহরী করতে হয়েছে। সামনে ঈদ আসলেও আমাদের মনে কোন আনন্দ নেই। কেউ যদি আমাদের থাকার মত জায়গা ও সংসার চালানোর মত যেকোন প্রকার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমরা উপকৃত হবো।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন