রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনমনে বাড়ছে অস্বস্তি

জনমনে বাড়ছে অস্বস্তি

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া

গত তিন মাসে এ অঞ্চলে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও গত ১৫ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। গতবছরও মার্চ থেকে জুলাইয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে মৃত্যু হয় ২৫ জনের

দূষিত পানি পানসহ দুঃসহ গরমের সঙ্গে অনাবৃষ্টি ডায়রিয়া বিস্তৃতির প্রধান কারণ

করোনা মহামারী থেকে কিছুটা স্বস্তি লাভের মধ্যেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমবনতি জনজীবনে নতুন সংকট তৈরি করেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনেই সরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এ হিসেব সরকারি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীদের। এর অন্তত দ্বিগুণ ডায়রিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ চিকিৎসকের স্মরণাপ্ন হয়ে ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত তিন মাসে এ অঞ্চলে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও গত ১৫ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। গতবছরও মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।

বরিশাল বিভাগিয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, এবারো দূষিত পানি পানসহ দুঃসহ গরমের সঙ্গে অনাবৃষ্টি দক্ষিনাঞ্চলে ডায়রিয়া বিস্তৃতির অন্যতম কারণ। তার মতে এ অঞ্চলে ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি প্রায় ২ লাখ ব্যাগ আইভি স্যালাইন ছাড়াও খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় এ্যান্টিবায়টিক ওষুধের মজুত রয়েছে। কেউ সরকারি হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্রে এলে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাবেনা বলেও জানান তিনি। তবে এবার এখনো ঢাকার আইসিডিডিআরবি’র কোনো কারিগরি অনুসন্ধানি দল দক্ষিণাঞ্চলে আসেনি। বিভাগীয় পরিচালকের মতে, গত বছরের সব লক্ষ্যনসমূহ নিয়েই মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। এতে সেভাবেই চিকিৎসায় সাড়া মিলছে বলেও জানান বিভাগীয় পরিচালক। অসমর্থিত সূত্রে এবার পটুয়াখালীতে দুজন ডায়রিয়া আক্রান্তের মুত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তা স্বীকার করেনি। তবে মৃত্যুর সংখ্যা না বড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৫দিনে আগের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রত বেড়ে চলেছে। এখন ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ থেকে ৪শ’র কোটায়। ১ এপ্রিলের পূর্বে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হলেও ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আরো ১০ হাজার বেড়ে মোট ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২২ হাজার ৫শ’র ওপরে। এখনো বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর পরিস্থিতি নাজুক। গত ৩ মাসে সর্বমোট আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজারের মধ্যে বরিশালেই সংখ্যাটা প্রায় ৮ হাজারের কাছে। ভোলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং পাটুযাখালীতেও ৪ হাজারের কাছে। এছাড়া পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার, বরগুনাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার হলেও গত ৪৮ ঘন্টায়ই আরো শতাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। ঝালকাঠিতেও এ পর্যন্ত প্রায় ১৮শ’ আক্রান্ত হলেও গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে ৫০-এর উর্ধ্বে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে ভোলা, পিরোজপুর ও বরগুনার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

আরও পড়ুনঃ  রাজধানীতে সীমিত আকারে চলছে গণপরিবহণ, ভাড়া তিনগুণের বেশি

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায়ই এখন ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ৩০টি উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বেশি। গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজারের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ২২ হাজার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন অবিলম্বে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র ডায়রিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ব্যাপক প্রচারনার পাশাপাশি সর্বত্র বিশুদ্ধ পানি সরবারহের বিষয়টি নিবিড় তদরকিতে রাখার তাগিদ দিয়েছেন। একই সাথে রোজাদার সহ সকলকেই বাসি এবং সব ধরনের ভাজা পোড়া খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি পান ও শরীরের জন্য সহনীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।

সংবাদটি শেয়ার করুন