- সুন্দরবনের বাঘ-হরিণ-সাপ-শুকরের উপদ্রব, গ্রামে আতংক
- শিগগিরই ভোলা নদী খনন শুরু হবে, জানালেন ডিএফও
আবারো সুন্দরবনের হরিন শরণখোলার লোকালয়ে চলে এসেছে। গতকাল রবিবার ভোর রাতে কোনো এক সময় হরিণটি ভোলা নদী পার হয়ে বন সংলগ্ন দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। সকালে গ্রামবাসী বন বিভাগকে জানালে নিকটস্থ দাসের ভাড়ানী টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা ভিসিএফ ও সিপিজি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হরিনটি ধরার চেষ্টা চালায়। বনরক্ষীদের সঙ্গে শত শত উৎসুক মানুষের ধাওয়ার মুখে হরিণটি ভোলা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে সুন্দরবনে চলে যায়।
এর আগে গত বুধবার একইভাবে বন থেকে বাঘের তাড়া খেয়ে দু’টি হরিণ পাশ^বর্তী পশ্চিম রাজপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। সেখানেও বনরক্ষী ও গ্রামের মানুষের ধাওয়ার মুখে বড় হরিণটি নদী সাঁতরে বনে ফিরে যায়। ছোট হরিনটিকে ধরে ধানসাগর স্টেশন এলাকার বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে রাজাপুর এলাকায় ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী পাড় হয়ে তিনটি হরিণ লোকালয়ে চলে আসার ব্যাপারে গ্রামবাসীর মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে বন বিভাগ, ভিসিএফ, সিপিজে ও গ্রামবাসীর কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
এলাকায় বাঘের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় প্রাণভয়ে হরিণগুলো দিগি¦দিক ছুটছে। এ হরিনগুলো পথ ভুলে লোকালয়ে ঢুুকে পড়ছে। কেউ বলছে, প্রতি বছর এ সময় এলাকার বনাঞ্চলে বিশেষ এক ধরনের মশার উৎপাত শুরু হয়। মশার কামড় থেকে বাঁচতে হরিণগুলো নদী সাঁতরে লোকালয়ে চলে আসছে। আবার কারো মতে, পলি জমে ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুধু হরিণ নয়, এ এলাকার বনাঞ্চল থেকে অহরহ বাঘ, হরিণ, সাপ ও শুকর লোকালয়ে চলে আসছে। অপরদিকে, গ্রামাঞ্চলের মহিষ গরু বনে ঢুকে পড়ে বন্যপ্রাণির আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের সবুর হাওলাদার ও আছাদ হাওলাদার জানান, গত তিন দিনে ভোলানদী পার হয়ে তিনটি হরিণ লোকালয়ে আসলেও সে গুলোকে ধাওয়া করে বনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই এলাকার গ্রাম পুলিশ শহিদুল ইসলাম ও ভিসিএফ সদস্য ইয়াসিন চাপরাশি জানান, সম্প্রতি তাদের গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের একটি মহিষ বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
পশ্চিম রাজাপুর টগরাবাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমিন চৌকিদার বলেন, তাদের গ্রামে বাঘ আতংক চলছে। রাতে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়। দলে দলে শুকর ঢুকে কৃষি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি করছে।
শরণখোলাসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফরিদ খান মিন্টু বলেন, ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি সহজেই লোকালয় চলে আসছে। বাড়ছে মানুষ ও বন্যপ্রাণির সংঘাত। সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভোলা নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
টাইগার টিমের সদস্য আলম হাওলাদার জানান, গত এক বছরে তারা বন সংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে নানা প্রজাতির ৩৮টি সাপ উদ্ধার করে বন বিভাগের মাধ্যমে শরণখোলার বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে দিয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঘের সংখ্যা বাড়লে তার উপদ্রবে হরিণ বা শুকর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পথ ভুলে লোকালয়ে ছুটে আসতে পারে। তবে সহজেই যাতে বন্যপ্রাণি লোকালয়ে আসতে না পারে তার জন্য শিগগিরই ভোলা নদী খনন করা হবে। ইতিমধ্যে সুরক্ষা নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভোলা নদী খননের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে। আগামী বছর কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।