শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাদুড়ের শতবছরের অভয়ারণ্য

বাদুড়ের শতবছরের অভয়ারণ্য
  • দুই বিঘায় জমিতে বসবাস

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিলুপ্তপ্রায় নিশাচর প্রাণি বাদুড়ের মেলা বসেছে। এক সময় এ উপজেলার গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলের বনে জঙ্গলে উঁচু গাছের মগডালে বাদুড়ের মাথা নিচু করে ঝুলিয়ে থাকার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ত। তখন বাদুড়ের উড়াউড়ি আর কিচির মিচির শব্দে চিরায়িত গ্রামীণ প্রকৃতি সেজেছিল অন্যরূপে। তবে বর্তমানে বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থল, খাবারের সংকট, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের লাইন নানা কারণে বিলুপ্ত প্রায় স্তন্যপায়ী প্রাণি বাদুড়। প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বাদুড় এখন দশ গ্রামেও চোখে পড়ে না। পাখির মতো উড়লেও আকৃতির কারণে এদের কদর নেই। নানা কল্প-কাহিনী আর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী নানা হুমকির মুখে থাকা সত্বেও বাদুড় শতবর্ষ ধরে উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের নগরবন গ্রামের প্রায় ২ বিঘা জমিতে একটি পুরাতন বটগাছ, শিমুল গাছ, বাশঁবাগানসহ প্রায় কিলোমিটার জুড়ে রাস্তার দু’ধারের রেইণ্ট্রি ইউক্লিপটার্স গাছে বাদুড়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ যেন বাদুড়ের রাজ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকায় সৌভাগ্যের প্রতীক মেনে বাদুড়দের ভিন্নভাবে গ্রহণ করায় ক্রমেই বংশবৃদ্ধি ঘটছে। প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে তাদের হুকের মতো পা দু’টো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়। যেন চোখ ফেরানো দায়। মাথায় সামান্য হলুদ রঙ থাকলেও পুরো দেহটি কালো। একটু শব্দ হলেই দল বেঁধে পালকহীন চামড়া মোড়ানো ডানায় কয়েকটা ঝাপটা দিয়ে আবার নীরব। রাতের অক্লান্ত শ্রমে যেন তারা শুধু একটু প্রশান্তির ঘুমই খুঁজছে। গোধূলির রং মাখতেই যেন অন্যান্য পাখি আর বাদুড়ের ছোটা ছুটিতে এলাকাটিতে সৃষ্টি হয় সৌন্দর্যের অবর্ণনীয় এক পরিবেশ। ওই গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, প্রায় ১০০ বছর ধরে এরা স্থায়ীভাবে এখানেই আছে। কাঠফাটা রোদ আর তীব্র গরমের মধ্যে বাদুড়ের ডানা মেলা দৃশ্যে এলাকাটিকে মনে হয় প্রকৃতির এক অপার সৌর্ন্দযের বেলাভূমি। আবার খাদ্যের সন্ধানে গোধুলির রঙ মাখতেই উড়ে চলা এবং ভোরে নীড়ে ফিরে আসা বাদুড়গুলো দেখে মনে হয় আকাশ যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ২০ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা শুরু

স্থানীয়রা জানান, বাদুড় একটি নিরিহ প্রাণি। মাঝে মধ্যে কিছুক্ষণ কিচিরমিচির শব্দ করে তবে পা নেই পেটের নিচে দু’টো হুক আছে তা নিয়ে গাছের ডালে মাথা নিচু করে ঝুলিয়ে থাকে। গরমে ডানা ছেড়ে হাত পাখার মত বাতাস করে। আবার নিস্তব্ধ  হয়ে যায়। এরা যেন পোষা প্রাণিদের মতোই নির্ভয়ে বসবাস করছে বহুকাল ধরে। এখন বাদুড় নিয়ে কল্প-কাহিনী আর কুসংস্কারের যুগ কেটে গেছে। এরা কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে। পরাগায়ণ সৃষ্টি করে। তাই মানবকল্যাণকারী ও পরিবেশবান্ধব এ স্তন্যপায়ী প্রাণীটি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন