শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেড়েছে যাত্রী কমেছে ট্রেন

বেড়েছে যাত্রী কমেছে ট্রেন
  • রংপুর স্টেশনে দুর্ভোগ চরমে

ব্রিটিশ আমলের পুরাতন রেলস্টেশন উত্তরের বিভাগীয় নগরী রংপুর। এ স্টেশনে প্রতিনিয়ত যাত্রী বাড়লেও দিন দিন কমছে ট্রেনের সংখ্যা। বিভাগীয় এ শহর থেকে করোনার আগে আপ ও ডাউন মিলিয়ে মোট ১৮টি ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে চলছে ১০টি। আটটি বন্ধ ট্রেনের মধ্যে করোনার শুরুতে ছয়টি এবং গত ২ মার্চ বন্ধ হয়েছে আরো দুটি ট্রেন। বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে ট্রেনের যাত্রী বিশেষ করে ঢাকাগামীরা বিদ্যমান দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের বরাদ্দকৃত সীমিত আসনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন না। এতে প্রতিদিন অনেক যাত্রীকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এ কারণে রংপুর-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি অন্যান্য রুটেও ট্রেন বাড়ানোর দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।

রংপুর রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ মাসে টিকিট বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৯১ টাকা। এ সময় যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬১ জন। জুলাই মাসে আয় হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ টাকা এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ২ হাজার ৫৩০ জন। আগস্টে আয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪০ টাকা এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ২২ হাজার ৭২১ জন। সেপ্টেম্বর মাসে আয় হয়েছে ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ১২৫ টাকা এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৭৬ জন। অক্টোবর মাসে আয় হয়েছে ৮৫ লাখ ১১ হাজার ৩০৪ টাকা এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৮৬ জন। নভেম্বর মাসে আয় হয়েছে ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৬৯ জন। ডিসেম্বর মাসে আয় হয়েছে ৮৭ লাখ ৬ হাজার ৫০৬ টাকা এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ৪০ হাজার ৬৭৯ জন। করোনার শুরুতে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ বন্ধ হওয়া ছয়টি ট্রেন হচ্ছে সেভেন আপ ও এইট ডাউন,  ডেমু আপ ও ডাউন এবং রমনা লোকাল আপ ও ডাউন। চলতি বছরের ২ মার্চ বন্ধ হওয়া ট্রেন দুটি হচ্ছে কমিউটার ৬৩ ও ৬৪ ।

আরও পড়ুনঃ  ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার সুপারিশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে

এদিকে ঢাকাগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকিট বরাদ্দ অল্প থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুরের যাত্রীরা। জরুরি কাজে রংপুর থেকে ঢাকা যেতে নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে ও সশরীরে টিকিট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিভাগীয় নগরী হিসেবে রংপুরের জন্য যে টিকিট বরাদ্দ তা সত্যি দুঃখজনক। তিনি দ্রুত ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনসহ বিদ্যমান ট্রেনের কোচ বাড়ানোর দাবি জানান।

রংপুর রেলস্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, করোনার আগে ১৮টি ট্রেন চললেও বর্তমানে চলছে ১০টি। যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, জুলাই থেকে ট্রেনগুলোয় আসনবিহীন টিকিট বিক্রি বন্ধ আছে। না হলে যাত্রী আরো বাড়ত। তিনি বলেন, বিভিন্ন রুটে ট্রেনের যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সবচেয়ে বেশি যাত্রী হচ্ছে ঢাকা রুটে। অথচ রংপুর এক্সপ্রেসে আসন বরাদ্দ আছে ২২৯টি ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে বরাদ্দ ১৫৪টি। এর মধ্যে অর্ধেক টিকিট যাত্রীরা কাউন্টার থেকে ও অর্ধেক টিকিট অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারেন, যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।

রংপুর সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, রংপুর বিভাগীয় শহর হিসেবে এখানে অনেক লোকের বাস। বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন অনেক মানুষের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ মানুষের নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে ট্রেন যাত্রা প্রথম পছন্দ। কিন্তু বর্তমানে ট্রেনের বরাদ্দকৃত সীমিত আসন দিয়ে বিপুল চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে রংপুর থেকে কাউনিয়া-পীরগাছা এবং বগুড়া হয়ে ঢাকা যাচ্ছে আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস। একে ঠিক রেখে যদি রাত ১০টার পর আরো একটি আন্তঃনগর ট্রেন রংপুর থেকে পার্বতীপুর হয়ে ঢাকা রুটে চালানো হয় তাহলে একটা বিরাট অংশের যাত্রীর চাহিদা পূরণ হবে।

আরও পড়ুনঃ  ভূমিকা রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে: প্রধানমন্ত্রী

রংপুর রেলের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, যাত্রীসেবা বাড়ানোর জন্য রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের ১নং প্লাটফর্ম বর্ধিতকরণ ও উঁচুকরণ, ২ ও ৩ নং প্লাটফর্মের মাঝে আইল্যান্ড পুনরায় নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন কাজ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে এক্সেস কন্ট্রোল নির্মাণের কাজ চলছে। এতে বৈধ যাত্রীদের সুবিধা হবে। তিনি বলেন, করোনাকালে বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো ইঞ্জিন সংকট এবং লোকামাস্টারের (চালক) অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। তিনি স্বীকার করেন রংপুর থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী বেড়েছে। এ বিশাল চাপ সামাল দিতে নতুন ট্রেন সংযোজন করা অথবা বিদ্যমান ট্রেনের কোচ সংখ্যা বাড়ানো দরকার। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত এবং দ্রুত এ সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন