প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল মাস জুড়ে তিস্তা নদী হয়ে যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেটেঁ পাড় হন চরাঞ্চলবাসী। প্রায় ৩৫ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে। অসময়ে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ডুবে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ- পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা,গম,পাট, মিষ্টি কুমড়া খেত। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপারের লাখো কৃষক।
এপ্রিল মাসে তিস্তার এরকম বন্যায় হতবাক চরাঞ্চলের কৃষক। এ সময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তাই দিয়ে তাদের চলে ১২ মাস। অসময়ের এই বন্যায় তিস্তার চরে কৃষকরা নিঃস্ব। বাকি দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে কাটবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারও কৃষক। এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার যাহা বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্যারাজের ১১ টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার সন্ধায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার যাহা বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হয়। গত ৭ দিন থেকে ভারতের উজানের প্রচুর পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কিউসেকে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গত ৭ দিনে তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিস্তার পানি কিছুটা কমে গেছে।
লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা এলাকার পাট চাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি বছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পাট চাষ করি। এবারও করছি। কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা গড্ডিমারী ইউপির দোয়ানী গ্রামের কৃষক আয়নুল হক বলেন, ৭ দিন থেকে ভারত থেকে পানি প্রবেশ করায় এলাকায় অনেক কৃষকের বোরো ধান, পেঁয়াজ, গম খেত পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। চরে আমার দুই বিঘা পিঁয়াজ খেত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয় তাহলে একটু উপকৃত হব।
হাতীবান্ধা উপজেলা গড্ডিমারী ইউপির দোয়ানী গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান জানান, তিস্তার বুকে ২৫ বিঘা জমিতে গম লাগিয়েছি তার মধ্যে ১৮ বিঘা আনতে পেরেছি আর বাকিগুলো নদীতে ভেসে গেছে। ১৫ বিঘা পিঁয়াজের মধ্যে ১০ বিঘা জমির পিয়াস নদীতে তলিয়ে গেছে। এদিকে লাগানো ১০ বিঘা বোরো ধান নদীতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি। সরকার যেন আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয়।
হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিসার ওমর ফারুক কে জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাচর বেষ্টিত এলাকায় তিস্তার পানিতে অর্ধেক হেক্টর জমির পিঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যারাজ পয়েন্টে ২০ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে কৃষকরা ক্ষতি মুখে পড়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে নদীর বুকে কৃষি জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জেলার কী ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা তালিকা তৈরি করছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
আনন্দবাজার/শহক