শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রীষ্মে সাঁকো-বর্ষায় খেয়া!

গ্রীষ্মে সাঁকো-বর্ষায় খেয়া!

বর্ষার পানিতে নদী থৈ-থৈ করবে এটাই স্বাভাবিক। বানের পানিতে দুকূল ভাসিয়ে নিবে এটাও অস্বাভাবিক নয়। এসময় নদী পাড়ের মানুষদের যাতায়াত সমস্য হবে এটাই বাস্তবতা। তবে গ্রীস্মের মৌসুমেও এসব অঞ্চলের মানুষদের ভোগান্তি থাকবে এটা মানতে নারাজ স্থানীয়রা। বর্ষায় খেয়া, গ্রীস্মে সাঁকো এমন চিত্র বহুদিনের। সারাবছরের ভোগিান্তির চিত্রটির দেখা মিলল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর গ্রামের বংশাই নদে। এ নদে সেতু হয়নি। সেতু না হওয়ার কষ্টে রয়েছেন দুপারের ১০ গ্রামের মানুষ। দুর্ভোগ সয়ে এলাকাবাসী বর্ষায় খেয়া আর শুস্ক মৌসুমে কাঠের সাঁকো দিয়ে এই নদ পারাপার হচ্ছেন। সেতু না হওয়ার কারণে এলাকার রাস্তাসহ অন্য কোনো উন্নয়নও তেমন হয়নি। এমন আক্ষেপ স্থানীয়দের। ধলাপাড়া-গাংগাইর এলাকায় বংশাই নদে একটি পাকা সেতু নির্মাণ স্থানীয় হাজারো মানুষের দাবি ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বংশাই নদে খেয়ার পরিবর্তে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। উঁচু-নিচু হওয়ায় বয়স্ক মানুষ, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নিরুপায় হয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছেন এ নদ।

উপজেলার ধলাপাড়া ও দেওপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর, সড়াসাক, আমজানি, বাদে-আমজানি, গোলাবাড়ি, ধলাপাড়া, মলাজানি, জুগিয়াটেংগর, নয়ারহাট, বর্গাসহ ১০টি গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে হয় বংশাই নদী পারাপার হয়ে। অত্র এলাকার সড়াসাক গ্রামে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাংগাইর গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া ধলাপাড়া এলাকায় রয়েছে একটি বড় বাজার, একটি কলেজ, একটি মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয় ও একটি বালিকা বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বংশাই নদী পার হয়েই লেখাপড়া করতে যেতে হয়। দেশ স্বাধীনের পর হতেই তারা বংশাই নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মানের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্থানে দাবী জানিয়ে আসছেন। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন ব্রীজ নির্মান করে দেয়ার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাদের দাবী অতি দ্রুত এখানে নির্মান করে দেয়া হোক একটি পাকা ব্রীজ। তাহলে তাদের দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগ দুর হবে।

আরও পড়ুনঃ  পঞ্চগড়ে ব্যাংক কর্মকর্তা সহ নতুন করে ১৫ জনের করোনা সনাক্ত

গাংগাইর গ্রামের সাধারণ মানুষ বলেন, বংশাই নদে সেতু না থাকায় গ্রামে পাকা সড়ক হয়নি। বর্ষা মৌসুমে খেয়া নৌকায় পারাপার হতে সময় লাগে প্রায় ২০ মিনিট। শিক্ষার্থীদের স্কুুল-কলেজে যাতায়াত, ফসল পরিবহনসহ উপজেলা সদরে যেতে হয় এই নদী পার হয়ে। ভরা বর্ষায় খেয়া নৌকাডুবি এবং শুকনোয় কাঠের সাঁকো পার হতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বংশাই নদে সেতু নির্মিত হয়নি। অথচ প্রতিদিন ১০ গ্রামের শত শত মানুষকে এই নদের ওপর দিয়ে পারাপার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয়রা সরকারের কাছে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

খেয়া নৌকার মাঝি দুলাল মিয়া বলেন, প্রায় ২৫ বছর যাবৎ নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করছি। এ জন্য বছরে সবার কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকা এবং ধান নিয়ে থাকি। বর্ষা মৌসুমে খেয়া থাকলেও শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করি। তবে এখানে একটি সেতু হলে আমাদের কষ্ট অনেক লাঘব হবে এবং মানুষ উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন।

ধলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এজহারুল ইসলাম মিঠু ভুঁইয়া বলেন, তিনি উপজেলা উন্নয়ন মিটিংয়ে অনেকবার দাবী তুলেছেন, ধলাপাড়া- গাংগাইর- কালিহাতী রাস্তায় বংশাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা জরুরি। বিষয়টি আমি স্থানীয় প্রশাসন ও এমপিকে অবগত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি হবে বলে আশা করি।

ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, সড়াসাক ও গাংগাইর গ্রামের বংশাই নদীতে ব্রিজের অভাবে স্থানীয় জনগনের দুর্ভোগের কথা আমি জানি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলে এখানে যাতে একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন