শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংকটে শিল্পে দুঃসংবাদ

গ্যাস সংকটে শিল্পে দুঃসংবাদ

উৎপাদন ব্যাহত-ক্রয়াদেশ বাতিলের শঙ্কা

  • গ্যাস সঙ্কটে জ¦লছেনা লাখ লাখ বাড়ির চুলা
  • উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি ব্যয়
  • জরুরি বৈঠকে সুরাহা মেলেনি

যেখানে গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই সেখানে একেবারেই শূন্য হয়ে আছে। এ কারণে কারখানায় অর্ধেক অংশ সবসময় বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। এতে কারখানায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন পিবিএস এবং ডিজেল জেনারেটর দিয়ে যতটুকু সম্ভব চালু রাখা হয়েছে

প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের ভান্ডার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের বুকে ৪৩তম। সমগ্র দেশে এ গ্যাস সঙ্কটের বেশির ভাগ প্রভাব পড়েছে শিল্পখাতে। এদিকে গ্যাসের তীব্র চাপ সঙ্কটে শিল্প অধ্যুষিত জেলা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গাজীপুরের শিল্প-কারখানাগুলোতে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর কারণেই শিল্প মালিকদের মাথায় পড়েছে বর্জ্রাঘাত। 

এ গ্যাসের চাপ সঙ্কটের কারণেই শিল্প-কারখানায় অর্ধেকে নেমে এসেছে উৎপাদন। অসহনীয় গরমের মধ্যে লোডশেডিংও বাড়িয়ে দিয়েছে পল্লিবিদ্যুৎ। শহরের বাসাবাড়িগুলোতে প্রথম রোজা থেকে গ্যাস সঙ্কটের কারণে ইফতারি ও সেহরি তৈরিতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন গ্রাহকরা।

গাজীপুরের শিল্প-কারখানর মালিক ও কর্মকর্তাদের দাবি, শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ ১৫পিএসআই থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র দুই/তিন পিএসআই’এ। আবার কোনো কোনো কারখানায় নেমে এসেছে শূন্যতে। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় চাহিদামতো উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানের পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও বায়ারদের চাহিদামতো শিপমেন্ট সরবরাহ করতে না পারলে বাতিল হয়ে যাবে ক্রয়াদেশ। এতে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য দেশের দিকে ঝুঁকে পড়বেন ক্রেতারা। তারা আরো বলেন, গ্যাসের এ রকম সংকটাবস্থা চলতে থাকলে, আমরা হয়ে যাবো দেউলিয়া।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে যে হাসপাতাল

জেলার শ্রীপুর উপজেলার মোশাররফ নিট কম্পোজিট কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া জানান, তাদের কারখানা তো অনেক দিন ধরেই গ্যাস সংকটে ভুগতেছে। বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন অবস্থা আরো বেশিই খারাপ। যেখানে গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই সেখানে একেবারেই শূন্য হয়ে আছে। এ কারণে কারখানায় অর্ধেক অংশ সবসময় বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। এতে কারখানায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন পিবিএস এবং ডিজেল জেনারেটর দিয়ে যতটুকু সম্ভব চালু রাখা হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরীর লক্ষীপুরা এলাকায় অবস্থিত স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানার জিএম (এডমিন) শরিফুল রেজা জানান, তীব্র গ্যাস সঙ্কট থাকার কারণে কারখানার দুটি বয়লার চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন তাদের কারখানায় ১০ হাজার পিস প্যান্ট উৎপাদন করার টার্গেট থাকে, কিন্ত সেখানে গ্যাস সঙ্কটের কারণে মাত্র ৪-৫ হাজার পিস উৎপাদন করা যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, বায়ারদের নিকট সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করতে শ্রমিকদের ওভারটাইম করাতে হয়। এতে করে কোনো কোনো দিন ওভারটাইম করিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি খরচ হয়ে যায় ৩-৪ লাখ টাকা। আবার গ্যাস সঙ্কটের কারণে ডিজেল দিয়ে ওই বয়লার দুটি চালাতে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আর এভাবেই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জব্বার ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার ব্যব¯স্থাপক খায়রুল ইসলাম জানান, কারখানায় গ্যাসের চাপ কোনোভাবেই ৫-৬ পিএসআইয়ের উপর উঠছে না। বেশির ভাগ সময় ৩-৪ এর মধ্যে উঠানামা করছে। এতে করে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টঙ্গীর বোর্ডবাজার এলাকায় সোমবার জেরোমা, হাজী ওয়াহেদ সরকার ও প্রগ্রেসিব নামের তিনটি সিএনজি স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে গাজীপুর তিতাস কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর জোনে ৬১০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস পাওয়া যাচ্চে ২৫০ থেকে ২৮০ মিলিয়ন ঘন ফুট। স্বাভাবিক সময়ে এ চাহিদা থাকে ৫০০ মিলিয়ন ঘন ফুটের বেশি। একারণেই গ্যাসের চাপ কম থাকায় শিল্প-কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাস সঙ্কটে গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষের বাসাবাড়ির চুলা জ্বলছে না। এতে করে এলাকাবাসী পড়েছেন বিপাকে।

আরও পড়ুনঃ  শ্রীপুর অব রোটারী ক্লাব এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ ও মাস্ক বিতরণ

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন জয়দেবপুর শাখা ব্যবস্থাপক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, কেন্দ্রীয়ভাবেই গ্যাস না পাওয়ায় সরবরাহও কমে গেছে। গ্যাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কতদিন লাগবে তা জানা নেই। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশনগুলো কিছু সময় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাসাবাড়িতেও গ্যাস নেই, শিল্প কারখানায় গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক শতশত অভিযোগ আসছে।

শিল্প নগরী গাজীপুরে তীব্র গ্যাস সঙ্কট কিভাবে নিরসনের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে গ্যাস সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন পারভীন, তিতাসের গাজীপুর শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহজাদা ফারাজি, ব্যবস্থাপক (জয়দেবপুর) নৃপেন্দ্রনাথ বিশ^াস, ব্যবস্থাপক (টঙ্গী) এরশাদ মাহমুদ, ব্যবস্থাপক (চন্দ্রা) মোস্তফা মাহবুব প্রমুখ।

এদিকে ওই জরুরী বৈঠকে অংশ নেয় জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও শিল্প-কারখানা মালিকরা। এ সভায় তিতাস গ্যাস কর্মকর্তারা কোন সমাধান দিতে পারেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন