শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুরবে অর্থনীতির চাকা

বাল্লা স্থলবন্দর

দেশের স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলেও চালু হওয়ার অপেক্ষার এখনও প্রহর গুনছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কেদেরাকোট ও কাটানীপারে স্থাপিত দেশের ২৩তম বাল্লা স্থলবন্দর। বর্তমানে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থলবন্দরটি আধুনিকায়নে কাজ করা হচ্ছে। শত শত শ্রমিক দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই বন্দরটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাল্লা স্থলবন্দর স্থাপনে সমৃদ্ধির পথে পা রেখেছে ওই অঞ্চরের মানুষ। এতে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন হবিগঞ্জবাসী। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার জন্য বাল্লা স্থলবন্দর এখন সম্ভাবনার দুয়ার। এটি চালু হলেই এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে।

ইতোমধ্যে স্থলবন্দরের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মো. মাহবুব আলী। সে সময় জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানসহ বন্দর কর্মকর্তা ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গেল বছরে স্থলবন্দর এলাকার অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি ও পণ্যের গুণগত মান যাচাই-বাচাই করতে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী রুহুল আমিন ও মেহেদী হাসান জোয়ারদার সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

স্থানীয়দের মতে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। বড় কিংবা ছোট কোনো ধরনেরই শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা কলকারাখানা না থাকায় এ অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার জীবন-যাপন করছেন। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, বাল্লা স্থলবন্দর চালু হলে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। এতে উপকৃত হবেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিনিয়োগকারী-ব্যবসায়ীরাও।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় বন্ধ হচ্ছে সোনার বাংলা ও উপকূল এক্সপ্রেস

গেল বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থলবন্দরের আবাসিক প্রকল্পের বাউন্ডারি নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। বর্তমানে আধুনিকায়নের কাজ চলমান। চুনারুঘাটবাসীর প্রাণের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খান বাল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা গাজীপুর ইউনিয়নের কাটানীপার গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি দেশের ২৩তম হিসেবে বাল্লা স্থলবন্দর ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চুনারুঘাট উপজেলার ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের কাটানীপার মৌজায় এক একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেখানে আবাসিক প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ বিমান প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় বাল্লা স্থলবন্দরটি স্থাপন করা হচ্ছে। এটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতে শুরু করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, স্থলবন্দরটি চালু হলে বিপুল সংখ্যক বেকার কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ ব্যাপারে ১নং গাজীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, শিগগিরি বন্দরটি চালু হলে এলাকার মানুষ লাভবান হবেন।

চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, স্থলবন্দরটি চালু হলে উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করবে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, স্থলবন্দরটি উন্নয়নে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসন বরাবর প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ। বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের টাকা বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ‘করোনার ক্যাপসুল’ সেবন না করার পরামর্শ

প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সালে চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা নামক স্থানে ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে বাল্লা স্থল শুল্কবন্দর চালু হয়। সেই শুল্কবন্দরটি দিয়ে সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে খোয়াই নদী। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে শ্রমিকরা মাথা ও কাঁধে করে পণ্য আনা-নেয়া করে থাকে। এতে একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানিকারকদের অর্থ ব্যয় হয় বেশি। এ সমস্যা দূর করতে ২০১২ সালের ১১ জুন ভারত ও বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধি দল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন শেষে উভয়পক্ষই শুল্কস্টেশনের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে কেদারাকোটে স্থলবন্দর করার ব্যাপারে একমত হয়।

২০১৭ সালে একনেক সভায় দেশের ২৩তম স্থলবন্দর হিসেবে বাল্লা অনুমোদন পায়। অবকাঠামো তৈরির অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়। পরের বছর ২১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত জমিতে বসতবাড়ি থাকায় স্থানীয়রা আপত্তি জানালে থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়াটি। তবে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থলবন্দরের জন্য ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি জরিপ সম্পন্ন হয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন