মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং দুর্ঘটনার শঙ্কা

ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং দুর্ঘটনার শঙ্কা

জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকার ট্রেনের লেভেল ক্রসিংটি অত্যন্ত ঝুিকপূর্ণ, যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আংশঙ্কা স্থানীয়দের

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনটি একটি বড় জংশন স্টেশন। এ স্টেশন থেকে দুটি রেলপথ দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন ও তারাকান্দি হয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলে গেছে। বর্তমানে জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকার ট্রেনের লেভেল ক্রসিংটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এনিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো নজরই নেই। তাদের এ উদাসীনতায় যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। জামালপুর রেলওয়ে প্ল্যাটফমের পশ্চিম পাশে পৌর শহরের ব্যস্ততম এলাকায় গেইটপাড়। প্রধান সড়কের উপর দীর্ঘদিন ধরে লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও সে দিকে কারো কোনো নজর নেই। রেলওয়ে গেইট ব্যারিয়ার না থাকায় যে কোন সময় এখানে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়,  পৌর শহরের গেইটপাড় এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুইটি রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১২ জোড়া ট্রেন চলাচল করে থাকে। গেইটপাড় এলাকাতে টি-৯৪ নং গেইট ব্যারিয়ারটি স্থাপিত। পূর্বে এ এলাকায় সিঙ্গেল সড়ক থাকাকালীন সময় একটি সিঙ্গেল গেইট ব্যারিয়ার ছিল। তবে ২০১৯ সাল থেকে ব্যস্ততম এ এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য একটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এ ওভারপাস নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সড়কের দু’পাশের জায়গা অধিগ্রহণ করে সড়কটি প্রশস্ত করা হয়। পূর্বে সিঙ্গেল সড়কের জন্য একটি গেইট বেরিয়ার থাকলেও বর্তমানে সড়কটি ডাবল হওয়ায় পূর্বের গেইট বেরিয়ারটি এখন আর কোনো কাজেই আসছে না। গেইটপাড় এলাকাটিতে মোটর সাইকেল, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, অটোরিক্সা, সিএজি চালিত অটোরিক্সা, বাস, ট্রাক আর মানুষের জটলা সবসময় লেগেই থাকে।

আরও পড়ুনঃ  বিটিআরসিকে ১০০০ কোটি টাকা প্রদান গ্রামীণফোনের

এ লেভেল ক্রসিং-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গেইটম্যান রিপন মিয়া, শ্রী সনজিৎ কর্মকার ও দুলাল আকন্দ জানান, রেলক্রসিং এর উপর কোনো গেইট ব্যারিয়ার না থাকায় আমরা চরম আতংকের মধ্যে থাকি। কখন যে কি হয়ে যায়?

জামালপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে জানায়, দিনে এবং রাতে গেইটপাড় এলাকাটিতে জটলা (জ্যাম) লেগে থাকার কারণে এখানে একটি রেলওয়ে ওভার পাস নির্মার্ণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যেই ২০১৭ সাল থেকে এ এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা হয়। এরপর ২০১৯ সাল থেকে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হলেও মাঝ পথে তা থেমে যায়। ওভারপাসটি ২০২২ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তিতে এর সমাপ্ত কাজ বর্ধিত করে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ওভারপাসটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

সড়কের দুই পাশে ভূমি অধিগ্রহনের কারণে সড়কটি বর্তমানে বেশ প্রশস্থ। এছাড়া এ এলাকায় রাস্তায় খানাখন্দে ভরা।  এতে সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় মাঝে মধ্যেই যানবাহনগুলো বিকল হয়ে পড়ে। এসময় হঠাৎ কোনো ট্রেন চলে আসলে পথচারীদের ডাক চিৎকারে এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আছাদ উজ জামান বলেন, ট্রেন চলাচলের সময় গেইটপাড় এলাকায় টি-৯৪ নাম্বারের গেইট বেরিয়ারটি দিয়ে প্রশস্থ হওয়া পুরো সড়ক বন্ধ করা যায় না। এতে ওই পথ দিয়ে কোনো ট্রেন যাতায়াত করার সময় গেইটে দায়িত্বরত গেইটম্যানদেরকে বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। সড়কের অর্ধেকটায় গেইট ব্যারিয়ার ফেলে অবশিষ্ট সড়কে দুই হাত তুলে অনেক কষ্টে তাদেরকে যানবাহন নিয়ন্ত্রন করতে হয়। সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার তৈরী করে নতুন করে দুই পাশে দুইটি গেইট বেরিয়ার স্থাপন করা খুবই জরুরি। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী(পথ) ও  উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) বরাবর আবেদন করেছি।

আরও পড়ুনঃ  মুজিববর্ষ উপলক্ষে সোনারগাঁয়ে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান

জামালপুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী(কার্য) রেজাউল হক বলেন, রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের লক্ষ্যে গেইটপাড় এলাকায় সড়ক প্রশস্থ করায় আমাদের পূর্বে গেইট বেরিয়ারটি এখন আর কোনো কাজে আসছে না। সড়ক প্রশস্থ হওয়ায় আমরা সড়কের মাঝখান দিয়ে একটি ডিভাইডার নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। সড়ক ডিভাইডারটি নির্মাণ করা হয়ে গেলে সড়কটিকে ওয়ানওয়ে সড়ক করা হবে। তখন একপাশ দিয়ে যানবাহনগুলো যাবে আর অন্য পাশ দিয়ে আসবে। ওই সময় দুই পাশে দুইটি গেইট বেরিয়ার স্থাপন করা হলে আর দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

জামালপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার সাদ্দাম হোসেন বলেন, গেইট ব্যারিয়ারের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমার সাথে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেনি। বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমার কাছে আসলে আমি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন