রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেতের খাঁচায় পেটে ভাত

বেতের খাঁচায় পেটে ভাত
  • খুচরা ও পাইকারী বাজারে প্রতিটি খাঁচা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে

ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের সাথে জড়িতদের বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে।  তাদেরকে ঋণ ও যাচাই-বাচাই করে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে-ৎ নাজমুল হোসেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত), বিসিক জেলা কার্যালয়, হবিগঞ্জ

এক সময় বাঁশ ও বেতশিল্পের খুবই জনপ্রিয়তা ছিল। শহর ও গ্রাম সবখানেই বাঁশ বেতের তৈরি পণ্যের ব্যবহার করা হতো। আবহমানকাল থেকে দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। গ্রামে বাঁশের তৈরি ঝুঁড়ি, ধামা, মোড়া, কুলা, খাঁচা, পানের খাঁচা, মাছ ধরার ফাঁদ, ধান রাখার ডোল, গোলা ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। কালের আবর্তে আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এসবের ব্যবহার। কালের পরিবর্তে এখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেতের শিল্পটি।

কয়েক বছর ধরে বাঁশশিল্পে চলছে চরম মন্দা। এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল লোকজন বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লাভের হার কম থাকায় অনেকেই এ শিল্পটি ছাড়তে বসেছেন। যদিও কিছু কিছু এলাকায় এ শিল্পটির এখনও দেখা মিলে। তবে খুবই কম পরিমানে। অনেক পরিবারের নারীরা সংসারে জোগান দিতে এ শিল্পটি ধরে রেখেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, হবিগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার অনেক পরিবার এ শিল্পটির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার বাগ-বনদক্ষিণ, কামারপাড়া, যমুনাবাদ, হামিদপুর, পূর্ব সুলতানশীসহ বিভিন্ন এলাকায় এ শিল্পটির দেখা মিলে। ওই এলাকার পারুল বেগম, রোকেয়া বেগম, শিল্পী আক্তার, তারফুল, আমিরুন্নেছা, জয়ফুল, সাহেদা, জরিনা ও কালুই বেগমসহ ১৫ জন নারী সদস্য এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। 

আরও পড়ুনঃ  'সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে কাজ করবে সরকার'

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ শিল্পে লাভের পরিমান কম থাকায় পরিবারের পুরুষরা এ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। পরিবারে অভাব অনটন থাকায় পরিবারের নারী সদস্যরা শিল্পটি ধরে রেখেছেন। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার পাশে বসে খাঁচা, কুলা, পানের খাঁচা, মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছেন।

বাগ-বনদক্ষিণ গ্রামের রোকেয়া বেগম জানান, প্রায় ১২ বছর ধরে তিনি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে ১৬ বছর ধরে পিতার বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। সংসারে অভাব থাকায় এ শিল্পটিই এখন তার একমাত্র ভরসা। কন্যা সন্তানদের পড়াশুনার খরচ ও পরিবারের খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ থেকে ৭টি খাঁচা তৈরি করেন তিনি। খুচরা ও পাইকারি বাজারে প্রতিটি খাঁচার মূল্য ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে তিনি প্রায় ৫০টি মুরগি ও পানের খাঁচা তৈরি করতে পারেন। এক সময় তিনি শহরের কোর্টস্টেশন এলাকায় গিয়ে এসব খাঁচা বিক্রি করতেন। এতে তার অনেক কষ্ট হত। এখন পাইকাররা প্রতি সপ্তাহে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এতে তার দৈনিক গড় আয় ১শ’ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা। এ টাকা দিয়েই কোনো রকম ভাবে চলে তার সংসার। তিনি জানান, প্রতিটি বাঁশের মূল্য ২শ’ টাকা। প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর বাকিতে একসাথে ২০টি বাঁশ ক্রয় করেন। পরে তিনি প্রতি সপ্তাহে খাঁচা বিক্রি করে দ্ইু সপ্তাহ পরপর ওই টাকা পরিশোধ করেন। মাঝে-মধ্যে বাকিতে বাঁশ না পাওয়া গেলে তাকে বেকার থাকতে হয়। এতে অনেক সময় তাকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  অসহায় সেই স্বপ্নার পাশে দাঁড়াল কাপ্তাই ফোরাম

এ শিল্পটি ধরে রাখতে সরকার যদি তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতো তাহলে তার জন্য অনেক উপকার হতো বলে জানান ওই নারী।

স্থানীয় আইনজীবি মইনুল হাসান দুলাল জানান, প্লাস্টিক সামগ্রীর দাম তুলনামূলক কম। এতে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের পরিবর্তে মেশিনে তৈরি প্লাস্টিক সামগ্রীর প্রতি গৃহস্থালিদের আগ্রহ বাড়ছে। এতে গ্রামবাংলার পরিচিত বাঁশশিল্প অনেকটা বিলুপ্তির পথে ধাবিত। এ শিল্পটি ধরে রাখতে সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিসিক জেলা কার্যালয়, হবিগঞ্জের সহকারি মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হোসেন বলেন, ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে পরিচিত।  এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে তাদেরকে ঋণ ও যাচাই-বাচাই করে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন