শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিকল ১৬ ডায়ালাইসিস মেশিন

বিকল ১৬ ডায়ালাইসিস মেশিন

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

  • সচল মেশিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময় ৫-৬টি বিকল থাকে
  • চিকিৎসার অভাবে ৬ রোগির মৃত্যু

উত্তরাঞ্চলের ২ কোটি মানুষের মধ্যে কিডনী রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানকার কিডনী ডায়ালাইসিস মেশিনের ২৮টির মধ্যে ১৬টি বিকল

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ২ কোটি মানুষের কিডনী রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত  চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ। এ বিভাগে কিডনী রোগীদের জীবন রক্ষাকারী ডায়ালাইসিস মেশিনের ২৮টির মধ্যে ১৬টি বিকল হয়ে পড়ে আছে। গত এক সপ্তাহ আগে ১২টি মেশিন সচল করা হলেও এর মধ্যে অন্তত ৫ থেকে ৬টি আবারও বেশির ভাগ সময় বিকল হয়ে যায়। মেশিনের অভাবে দুরারোগ্য কিডনীরোগে আক্রান্ত অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ছে। শুধু তাই নয় ডায়লাইসিস করতে রোগীদের সুই থেকে শুরু করে স্যালাইনসহ সব মালামাল বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ডায়লাইসিস বিভাগে লুটপাট, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে তামাশা হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের। গত তিন দিনে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে ৬ জন কিডনী  রোগী।

পঞ্চগড় থেকে দুটি কিডনী বিকল হওয়া মুমূর্ষ বাবাকে নিয়ে এসেছেন কলেজ ছাত্র অফজাল হোসেন। তার বাবাকে বাঁচানোর করুণ আর্তির সঙ্গে বুক ফাটা আর্তনাদ অনেককে কাঁদিয়েছে। তিনি বলেন, গত তিন দিন ধরে ডায়লাইসিস ইউনিটে অবস্থান করছেন তিনি। সিরিয়াল পাচ্ছেন না। একবার সিরিয়াল পেলেও আধাঘণ্টা ডায়লাইসিস করা কালিন হঠাৎ করে ডায়লাইসিস মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। এদিকে তার অবস্থা অবনতি হচ্ছে। তিনি জানান, তাদের আর্থিক তেমন কোনো সঙ্গতি নেই হাসপাতালের বাইরে ডায়লাইসিস করাতে। কেন ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো বার বার বিকল হচ্ছে। মেশিন সচল করা যাচ্ছে না কেনো! এর জবাব আমরা কার কাছে চাইবো। গাইবান্ধা থেকে এসেছেন আনোয়ার বেগম। ডায়লাইসিস করাতে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে দুদিন ডায়ালাইসিস করতে হবে। তবে মেশিন সংকটের কারনে একবার করতে হচ্ছে। তাও কমপক্ষে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ডায়লাইসিস না করালে পূর্ণ হয় না সেখানে দেড় থেকে দু’ঘন্টার বেশি করানো হচ্ছে না। তার স্বামী সাহোবুল আলম জানান, আমরা ২৫ হাজার টাকায় প্যাকেজ কিনেছি। যা দিয়ে মাসে চার বার করে ৬ মাস ডায়ালাইসিস করা যায়। তবে ইদানিং সুই থেকে শুরু করে স্যালাইনসহ কোনো উপকরণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করছে না। বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ৬ থেকে ৭শ’ টাকা ব্যয় হচ্ছে। আমাদের মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে যা কোনোভাবেই বহন করা সম্ভব হচ্ছেনা। তার উপর এখন যে ভাবে ডায়লাইসিস করানো হচ্ছে তাতে করে রোগীরা এমনিতেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।

আরও পড়ুনঃ  করোনা মহামারির সময় গ্রামে বেড়েছে বাল্যবিয়ের প্রবণতা

রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানালেন বৃহস্পতিবার এসেছিলাম মেশিন খারাপ থাকায় চলে গেছি। আজ আবার আসলাম আধাঘণ্টা ডায়লাইসিস দেবার পর মেশিনটি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আবারো দেবার জন্য। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের অধিন ডায়লাইসিস বিভাগে ৪ ঘণ্টা ঘুরে যে এ দৃশ্য দেখা যায়। একজন রোগী ডায়লাইসিস করছেন তার কাছে অপেক্ষা করছেন আরো তিন রোগী। এ ভাবেই ডায়লাইসিস বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের করুণ আর্তি হাসপাতালের বাতাস ভারি হলেও কর্তৃপক্ষের তাদের আর্তির কোনো গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়নি।

ডায়লাইসিস বিভাগের কর্তব্যরত ওয়ার্ড মাষ্টার শরিফুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন রোগীকে ডায়ালাইসিস করতে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। তবে, আমরা মেশিন না থাকায় দিতে পারছি না, এতে করে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখানে রোগীদের এতটাই ভিড় একজনের ডায়ালাইসিস চলে আর একজন রোগী দাঁড়িয়ে থাকে ডায়ালাইসিস করার জন্য।

নেফ্রোলজি ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও ষ্টাফ নার্স আকলিমা বেগম অকপটে স্বীকার করলেন ডায়ালাইসিস মেশিনের ২৮টির মধ্যে ১৬টি বিকল হয়ে পড়ে আছে। তার মধ্যে ৩টি মনিটর কাজ না করায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার ১২ থেকে ১৩টি ভালো থাকলেও এর মধ্যে কখন কোনটা ভালো থাকে কখন বিকল হয়ে যায় তার কোনো গ্যরান্টি নেই।

ডায়লাইসিস বিভাগের চীফ টেকনেশিয়ান মাসুদ রানা বলেন, ডায়লাইসি মেশিনের সবগুলোর আয়ুস্কাল শেষের দিকে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ জন রোগীকে ডায়লাইসিস করাতে হয় কারণ তারা সকলেই তালিকাভুক্ত। এর বাইরে নেফ্রোলজি বিভাগের রোগী আছে। ১৮ ঘন্টা সার্ভিস দিয়েও আমরা কুলাতে পারছিনা। হাসপাতালের পরিচালকসহ বড় কর্তাদের অনেক বার বলা হয়েছে তারা যদি ব্যবস্থা নেন তাহলেই সচল হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  বিস্ফোরণ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে : প্রধানমন্ত্রী

হাসপাতালের পরিচালক ডা, রেজাউল ইসলাম জানান, বিকল হওয়া ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো সচল করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা কিডনী রোগীদের চিকিৎসার ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা না হলে অনেক রোগি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন