শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেমিট্যান্সে ফিরছে সুবাতাস

রেমিট্যান্সে ফিরছে সুবাতাস

করোনার কারণে মাঝখানে কয়েকমাস ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ গতিহীন হয়ে পড়েছিল। কমতে শুরু করেছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। তবে সেই গতিহীন অবস্থা কেটে গিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া আবারো সক্রিয় হয়েছে।

সূত্রমতে, বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১ লাখ ৩১ হাজার অভিবাসী কর্মী বিদেশের কর্মস্থলে যোগ দিতে গেছেন। যাদের বেশিরভাগই স্বল্প-দক্ষ। তবে এটা বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ অভিবাসনের ঘটনা। এর আগে সর্বোচ্চ শ্রম অভিবাসনের রেকর্ড হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে, সে সময় ১ লাখের কিছু বেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমান।

জনশক্তি রফতানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতির চাঙ্গাভাব, কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিধিনিষেধের কড়াকড়ি শিথিল হওয়ায় বিদেশে কর্মসংস্থান প্রত্যাশীরা তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে পারছে। এছাড়া, সৌদি কোম্পানিগুলোতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের নিয়োগের কোটা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোও এই রেকর্ড বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলেও জানান তারা। তিন বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আগামী মাসগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে।

এরআগে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারির চরম সংকট কালে মুখ থুবড়ে পড়ে বিদেশে চাকরির বাজার। তবে ২০২১ সালের আগস্ট নাগাদ তা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তারপর থেকেই অব্যাহত রয়েছে কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ফলে প্রায় মহামারি পূর্ব সময়ের মাত্রায় ফিরছে জনশক্তি রপ্তানি। ২০২১ সালে প্রায় ৬ লাখ ১৭ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে নতুন কর্মী নিয়োগের এ সংখ্যা ছিল ৭ লাখের বেশি। ভ্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধের কড়াকড়িতে ২০২০ সালে এই সংখ্যা মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজারে নেমে আসে বলে বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে। মহামারি হানা দেওয়ার আগে, প্রতি মাসে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিদেশ যেতেন। বেশিরভাগই যেতেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে।

আরও পড়ুনঃ  সৌদিতে প্রবেশের অনুমতি পেল বাংলাদেশ

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশিদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। মোট বৈদেশিক চাকরির ৭৪ শতাংশই হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। এরপর যথাক্রমে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সিঙ্গাপুর, জর্ডান ও কাতার। ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ সংখ্যক বা ৮৭ হাজার ২১২ জন কর্মী সৌদি আরবে যান। আমিরাতে যান ১৪ হাজার ৯২৬ জন। ওমানে ১৪ হাজার ৯২২, সিঙ্গাপুরে ৬ হাজার ৫৩৬, জর্ডানে ১ হাজার ৯৭১ এবং কাতারে গিয়েছেন ১ হাজার ৪৩০ জন। এছাড়া কিছু দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান বা রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার টেকনিশিয়ান হিসেবে বিভিন্ন দেশে গিয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)- এর তথ্যানুসারে, ২০২১ দেশের মোট অভিবাসী কর্মীদের ৭৪ শতাংশই হলেন অদক্ষ। ২০২১ সালে বিদেশ যাওয়া দক্ষ কর্মীর পরিমাণ ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ছিল ৪৪ শতাংশ। এদিকে, গত শনিবার রেমিট্যান্সের ওপর দেওয়া প্রণোদনা আগের ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে প্রবাসী আয় প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমার পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানাল সরকার। সরকারি তথ্যানুসারে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১০ লাখের কর্মসংস্থান হয় ২০১৭ সালে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন