শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডলারের ওপর রেমিট্যান্সের ‘ঘা’

ডলারের ওপর রেমিট্যান্সের ‘ঘা’

রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় ডলার সঙ্কটে পড়েছে দেশ। ডলারের কাছে কয়েক দফা মান হারিয়েছে টাকা। বাজারের অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার ছাড়ছে। তারপরও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। বেড়েই চলেছে দাম। সংকট নিয়ে হতাশা থাকলেও ভরসা ছিলো রেমিট্যান্সে।

তবে এবার সে আশা রূপ নিয়েছে হতাশায়। এবার ডলারের সংকটে ‘অশনি’ বার্তা দিচ্ছে প্রবাসী আয়। হঠাৎ করে কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা দীর্ঘায়িত হতে থাকবে বলে সতর্ক করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৮ কো‌টি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা ধরে) এই অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। আর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় এবার ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে সব সময় বেশি রেমিট্যান্স আসে। কারণ প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের খরচের জন্য বেশি অর্থ পাঠায়। গেল মাসে একটু কম এসেছে। আগামী মাসে আবার বাড়বে, কারণ সামনে কোরবানির ঈদ। তখন আবার প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে।

আরও পড়ুনঃ  ২০২১ সাল নাগাদ খাদ্য রফতানির লক্ষ্য ১০০ কোটি ডলার

সর্বশেষ তথ্য বলছে, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। এরপর থেকেই ডলারের কাছে মান হারাতে থাকে টাকা।

দেশের ডলারের দামে অস্থিরতা কাটাতে এক রেট বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপেক্ষিতে রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল।

এদিকে, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। তবে হঠাৎ যেন ডলারের দাম বেশি বাড়িয়ে না ফেলা হয়, সেদিকে নজর রাখতে ব্যাংকগুলোকে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যাতে দাম বেশি বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছে।

আরও পড়ুনঃ  ১৯ জেলায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন