শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করে সংসদে বিল পাস

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করে সংসদে বিল পাস

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রণীত দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করেছে সরকার। আইনটি এতদিন বিভিন্ন মেয়াদে সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবার সময় বাড়ানোর পরিবর্তে স্থায়ী রূপ দিতে জাতীয় সংসদে ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন)’ বিল পাস করা হয়েছে।

বিরোধী দলের নেতারা এসময় সমালোচনা করে সংসদে আইনটি স্থায়ী না করার প্রস্তাব দিলেও কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এই আইনটি ২০০২ সালে প্রথম করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেদিন মন্ত্রিসভায় বিলের খসড়া অনুমোদনের পর মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিল সংসদে পাস হলো। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্যকোনো সংশোধনী আনা হয়নি। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিল তখন আপনারা (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ) বলেছিলেন— এটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। এই আইনটা রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যেকোন কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সে আইনটা আপনারা রেখেছেন। আমি জানি না কেন রেখেছেন? চুন্নু বলেন, যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, স্থায়ীভাবে আইনটা করবেন, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্য তো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কি এটা বলতে চান, বিএনপি যে আইনটা এনেছিল তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন। তিনি বলেন, র‌্যাবের যখন গঠন করা হয়েছিল আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। সেই র‌্যাব এখন টিকে আছে, তারা কাজ করছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি প্রয়োজন পড়ে এক/দুই বছর আইনের মেয়াদ বাড়ান। কিন্তু আইনটা স্থায়ী করবেন না, করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আফসোস করবেন।

আরও পড়ুনঃ  মন্দাতেও সাইবার হামলা

এদিকে জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আইনটি আনা হয়েছিল বিএনপির সময়। ওই সময় আমরা ও আজকের আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধিতা করেছিলাম। তারপরও আইনটি পাস হয়েছিল। আজকেও পাস হবে। আমার প্রশ্ন হলো যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন এক রকম থাকবে না। তিনি আইনটিকে স্থায়ী না করে পাঁচ/চার বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আইনটি করার সময় বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি ছিল বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সেসময় নানা ধরনের অপরাধ হতো, তাই হয়ত আইনটি তৎকালীন সরকার করেছিল। আমি মনেকরি আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিল তাৎক্ষণিক বিচার যেন মানুষ পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় সেটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।

সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠান যেন এ আইনের মাধ্যমে বিচার হয় উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু সংসদ সদস্য না, অনেকেই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। কারণ একটাই যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। সংসদ সদস্যদের কেউ বলেনি আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। তারা সময় বৃদ্ধি করে দিয়ে আইনটি চালু থাকার কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে আমরা কোনো রকম সংশোধন করি নাই। কাউকে উদ্দেশ্য করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না, এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে।’ সংশোধনীর আলোচনায় মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আইনটি ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইনটি করেছিল আপনারা তার বিরোধিতা করেছিলেন কেন? এখন ভালো হয়ে গেল! আপনি বলেছিলেন, অপপ্রয়োগ হয় কিনা যারা আন্দোলন করছে তারা বলতে পারবে। আমরা যদি কখনো আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই তখন বলতে পারব অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইনটি কখন আনা হয়েছিল তা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন