শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিডনিতে পাথর হওয়ার ৫ লক্ষণ এবং করণীয়

কিডনিতে পাথর হওয়ার ৫ লক্ষণ এবং করণীয়

গ্যাস্ট্রিকের কারণে পেটের বিভিন্ন সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। পেটের বিভিন্ন সমস্যা শুধু গ্যাস্ট্রিকের কারণে হবে তা নয়। জানলে অবাক হবেন, এই সমস্যাও কিন্তু কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। একই সঙ্গে তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার মতো নানা লক্ষণ কিন্তু কিডনিতে পাথরের ইঙ্গিত দেয়।

আসলে কিডনিতে পাথর কোথায় ও কতগুলো আছে এ সবের উপরেই অসুখের লক্ষণ নির্ভর করে। পাথর যদি খুব ছোট আকারের হয়, তাহলে কোনো লক্ষণ নাও টের পেতে পারেন।

তাই কিছু লক্ষণ জেনে রাখা ভালো, যাতে এই অসুখ নিয়ে আগাম সচেতন হওয়া যায়। কিডনিতে পাথর জমেছে কি না, তা কোন কোন লক্ষণে বুঝবেন জেনে নিন-

পিঠ ও পাজরে ব্যথা: কিডনিতে পাথর হলে পিঠের দিক ও পাঁজরের দু’পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে। ব্যথা অল্প হলেও অবহেলা করবেন না। প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যথা বেশি দিন ফেলে রাখলে শরীরের অন্দরে জটিলতা বাড়তে পারে।

তলপেটে ব্যথা: তলপেটেও ব্যথা হতে পারে। বেশ কিছু দিন ধরে এই ব্যথা হতে থাকে, তা হলে সাধারণ সমস্যা বলে এড়িয়ে যাবেন না। কিডনিতে পাথর জমার অন্যতম লক্ষণ হলো তলপেটে ব্যথা। ব্যথা কিছুতেই না কমলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ করে নিন।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া: কিডনিতে পাথর জমলে প্রস্রাবের সময়ে কিংবা প্রস্রাবের পরবর্তী সময়ে জ্বালা অনুভব হয়। প্রস্রাবের সময়ে কোনও রকম কষ্ট অনুভব হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের সঙ্গে যদি রক্ত দেখা দেয়, তা হলে তা আরও চিন্তার। এই লক্ষণগুলি এক বার দেখা দিলে তা এড়িয়ে যাবেন না।

আরও পড়ুনঃ  আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা: কিছু খেলেই বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, শারীরিক ক্লান্তি, ক্ষুধা না লাগা ইত্যাদি কিডনিতে পাথর জমার লক্ষণ হতে পারে। অনেকেই এই উপসর্গগুলোকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভেবে ভুল করেন। তাই এমন কিছু লক্ষণ দেখলে এড়িয়ে না গিয়ে বরং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

জ্বর হওয়া: ঘন ঘন জ্বর হওয়াও কিন্তু কিডনিতে পাথর জমার লক্ষণ। ঠান্ডা লাগার কারণেই যে সব সময় জ্বর হবে এমনটি ভাববেন না। কিডনিতে পাথর হলেও জ্বর হয়। সূত্র: মায়োক্লিনিক

কিডনিতে পাথর রোধে ৫ করণীয়

কিডনির পাথর আসলে খাবার থেকে গৃহীত খনিজ পদার্থের নিরেট অবস্থা। খাদ্যের উপাদানই এই পাথর তৈরি করে। এসব উপাদান মূত্রের সঙ্গে বের হয়ে যেতে পারে না, কিডনিতেই থেকে যায়। কোনোভাবে পাথর মূত্রপথে আটকে গেলে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া গতি থাকে না। কিডনিতে পাথর যেকোনো মানুষের হতে পারে। আবার অনেক মানুষের কখনোই হয় না, কয়েকটি বিষয় মেনে চলার কারণে।

ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড বালটিমোর ওয়াশিংটন মেডিক্যাল সেন্টারের এন্ডুরোলজি অ্যান্ড কিডনি বিভাগের পরিচালক ড. জুলিও ডাভালোস জানিয়েছেন, কিডনির পাথর থেকে দূরে থাকতে হলে আপনাকে পাঁচটি বিষয় মেনে চলতে হবে।

১. জলযোজিত থাকা: পাথর সৃষ্টির পেছনের বড় কারণটি হলো দেহে পানির অভাব। খাদ্যের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস বা ইউরিক এসিডের মতো নানা খনিজ উপাদান দ্রবীভূত না হলে তা মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে না। ‘এ সমস্যা নিয়ে যত মানুষ এসেছে তাদের প্রতিদিন তিন লিটার পর্যন্ত পানি খাওয়া জরুরি ছিল’, জানান ড. জুলিও। ঘোলাটে ইউরিন দেহে পানির অভাবের লক্ষণ নির্দেশ করে। যথেষ্ট পানি খেলে একজন মানুষ প্রতিদিন আড়াই লিটার মূত্র ত্যাগ করবে। কাজেই প্রতিদিন নিয়মিত পানি খেতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  বাঁধাকপির সহায়তায় দূর করুন ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ

২. লবণ কমিয়ে দিন: আমেরিকার এক জরিপে বলা হয়, আমেরিকানরা গড়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করে। প্রত্যেকের প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম লবণ খাওয়া প্রয়োজন হলেও প্রায় পাঁচ হাজার মিলিগ্রাম লবণ দেহে চালান হয়। লবণ প্রস্রাবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম উৎপন্ন করে। এতে খনিজ জমতে শুরু করে। মনে রাখবেন, খাবার থেকে প্রতিদিন দেড় হাজার মিলিগ্রাম লবণ দেহে প্রবেশ করে।

৩. পরিমিত ক্যালসিয়াম: ড. ডাভালোস বলেন, অতিরিক্ত দুধ, পনির বা আইসক্রিম খাওয়ার কারণে কিডনিতে পাথর হয় বলে মারাত্মক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পাথর তৈরিতে ক্যালসিয়াম মূল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু খাদ্যতালিকা থেকে এটি পুরোপুরি বাদ দিলে বরং পাথরের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ জানায়, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। তবে আগে থেকেই কিডনিতে পাথর থাকলে হয়তো চিকিৎসক প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম খেতে মানা করবেন।

৪. পরিমিত প্রোটিন: রেড মিট ও ডিমের মতো উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দেহে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ কিডনিতে পাথর দেখা দিতে পারে। এসব খাবার দেহে সাইট্রেট উৎপাদনের পরিমাণও কমিয়ে দেয়। এটি মূত্রের এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পাথর হওয়া রোধ করে।

৫. পরীক্ষা করানো: যদি কিডনিতে একটিমাত্র পাথরও থেকে থাকে, তবে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন দ্বিতীয়টি হওয়া কিভাবে রোধ করা যায়। আরো পাথর হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করে ডাক্তারকে দেখিয়ে দিন। খুব সাধারণ মানের একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই কিডনির পাথরের খবর জেনে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু রোগী বা চিকিৎসক কেউই বিষয়টি করতে আগ্রহ বোধ করেন না। তাই অবশ্যই একটি সাধারণ পরীক্ষা করিয়ে জেনে নিন। দেখে নিন কিডনিতে পাথর আছে কি না।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন