শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আখ নিয়ে বিপাকে ৩০ হাজার চাষি

লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে গাইবান্ধার একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রংপুর চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এতে বিপাকে পড়েছে পাঁচ উপজেলার আখচাষিরা।

রংপুর চিনিকল বন্ধ

  • ধানের বদলে আখচাষ, ক্রেতার অভাবে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতে
  • লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে গাইবান্ধার একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রংপুর চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এতে বিপাকে পড়েছে পাঁচ উপজেলার আখচাষিরা। এ মৌসুমে তাদের শত শত হেক্টর জমির আখ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাতে করে ৩০ হাজার চাষি তাদের পড়েছেন মহাবিপদে।

    গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রংপুর সুগার মিল। প্রতিষ্ঠানটি আখ নেয়ার কথা বলে মিলজোন এলাকায় আখ চাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করে। মিল কর্তৃপক্ষের আশ^াসে অন্য ফসল চাষ না করে জমিতে আখ চাষ করেন চাষিরা। ভালো দরের আশায় কৃষকরা জমিতে ধানের বদলে আখ চাষ করেন। স্বপ্ন ছিলো এ আখ বিক্রি করে নতুন ফসল ঘরে তুলবেন। এজন্য সার, কীটনাশকসহ সেচ দিতে তাদের বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। সর্বমোট জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৭ হাজার চাষি তাদের ৮০২ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করেন।

    রংপুর সুগার মিলের তথ্যমতে, রংপুর সুগার মিলের কার্যক্রম বন্ধ হলেও সকল কার্যক্রম চালু রয়েছে জয়পুরহাট সুগারমিলে। তবে মিল বন্ধের কারণে কিছু শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের যোগদান করলেও মহিমাগঞ্জ সুগারমিলে ছাটাই করার ফলে বেকার অনেক শ্রমিক। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ আখও কৃষকদের জমিতেই পড়ে থাকে।
    সুগারমিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, এবার মিলে কোনো আখ ক্রয় করা হয়নি। এখানকার আখ জয়পুরহাটে সুগারমিলে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে মাইকিং করে আখ চাষিদের জানিয়ে দেয়া হয়। তবে কিছু চাষি আখ বিক্রি না করে জমিতে ফেলে রাখেন।

    আরও পড়ুনঃ  খুললো দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে 

    মহিমাগঞ্জ সুগার মিল এলাকার চাষি মঞ্জুর হোসেন বলেন, অনেক আশা নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলাম। এতে ২ লাখ টাকা ধার দেনা করে আখ চাষ করেন। তবে, মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আখ জমিতেই পড়ে আছে। বিক্রি করতে না পারায় তিনি ২ লাখ টাকার দেনা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাওনাদার তার পেছনে তাড়া দিচ্ছেন দেনা শোধের জন্য। এখন তিনি হতাশ। কি করবেন ভেবে কুল পাচ্ছে না ।

    আখচাষি স্যামল চন্দ্র বর্মন বলেন, মিলে আখ ক্রয় না করায় তাদের জমির আখ রোদ, কুয়াশা ও আখের বাড়তি হতে থাকে। আখ বাড়ন্ত হওয়ায় শুকিয়ে রস কমে যাচ্ছে। এজন্য আখচাষিদেরকে নতুন করে জমিতে সেচ দিয়ে আখ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হচ্ছে। আর এজন্য লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

    রংপুর সুগারমিলের (ভারপ্রাপ্ত) মহাব্যবস্থাপক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মিলটি প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মিলজোন এলাকার বিকল্প ব্যবস্থায় আখ ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছুটা সময় বেশি লাগার কারণে চাষিরা হতাশ হয়েছেন।

    আনন্দবাজার/শহক

    Print Friendly, PDF & Email

    সংবাদটি শেয়ার করুন