শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মূলধন বেড়েছে হাজার কোটি টাকা

মূলধন বেড়েছে হাজার কোটি টাকা

বিদায়ি সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক, লেনদেন, ৫৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর সহ মূলধন বেড়েছে। গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজারের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই ও সিএসই) মূলধন বেড়েছে ৯০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূলধন বেড়েছে ডিএসইর ২৩৮ কোটি টাকা এবং সিএসইর ৬৭১ কোটি টাকা।

“বছরের শুরু থেকে এ পযর্ন্ত পুঁজিবাজার উত্থানের দারুণ চমক দেখিয়েছে। কারনবিহীন বেড়ে ওঠেছে পুঁজিবাজার মূলধন। তাল মিলিয়ে চমক দিয়েছে লেনদেন। এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। এসব চমক কারনে ১৫ কার্যদিবসে মধ্যে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৪৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।”

পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়া-কমা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি যেমন ভালো লক্ষন না, তেমনি কমাও না। সব ক্ষেত্রেই বাড়া-কমার একটা সীমা থাকে। যখন সেই সীমা অতিক্রম করে, সেই ক্ষেত্রে সবার মনে অনেকগুলোর প্রশ্ন তৈরি হয়। এসব প্রশ্নের পরিষ্কার ও যৌক্তিক জবাব জানা থাকলে, সেটা অন্য কথা। না জানা থাকলে সেই ক্ষেত্রে প্রায় সবাই বিযয়টি ভালো চোখে দেখে না। চলতি বছরের প্রথম ১০ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন বেড়েছিল ৪৬ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। মূলধনের এ ধরনের বৃদ্ধিকে বাঁকা চোখে দেখেছিলেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। এই বৃদ্ধির কারনে নানান ধরনের প্রশ্ন জন্ম দিয়েছিলো। অনেকেই মনে করেছিলেন পুঁজিবাজারে থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে খারাপ চক্রদের নতুন কৌশল। এসব কারনে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত ছিলেন। বিরত থাকার পরও উত্থান কারনে গেল সপ্তাহ বা গত ৫ পাঁচ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন বেড়েছে ৯০৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজরে মূলধন এ ধরনের বৃদ্ধি স্বাভাবিক নিয়মে হয়েছে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা।

আরও পড়ুনঃ  করোনা আতঙ্কে ক্রেতা শূন্য রাজধানীর চকবাজার

ঢাকা ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে (১৩ জানুয়ারি) মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এই সময়ে ব্যবধানে ডিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন বেড়েছে ২৩৮ কোটি ২৭ লাখ। গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে সিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে (১৩ জানুয়ারি) ছিল ৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৭৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে সিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন বেড়েছে ৬৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে (ডিএসই ও সিএসই) মূলধন বেড়েছে ৯০৯ কোটি ৮ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার সংশিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে দেখা যাচ্ছে সূচকসহ লেনদেন উত্থান ক্ষেত্রে দারুণ চমক দেখাচ্ছে পুঁজিবাজার। কেন দেখাচ্ছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। হতে পারে গত বছরের শেষদিকের মন্দা পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে তারাই নতুন বছরে পুঁজিবাজার উত্থানের ঝলক দেখাচ্ছে। উত্থান পুঁজিবাজারে অতি দামে শেয়ার ক্রয় করা থেকে বিরত সহ লোকসানে শেয়ার বিক্রয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘ডিএসইর পুঁজিবাজার মুলধন ৩ লাখ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকায় ওপরে উন্নীত হয়েছে। অনেকে এই বাজারকে ওভার-ভ্যালুড বলে মনে করছেন, যা ঠিক নয়।’

আরও পড়ুনঃ  সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা

বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারের সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১০৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১৯ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট ও শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৬৩৫ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে ও ১ হাজার ৫০৮ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৭১ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৮১৭ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৫০ সূচক ১২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট, সিএসই৩০ সূচক ৫৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৬২ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট ও সিএসআই সূচক ২০ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৫৩৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৫১৭ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে, ১২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৯১ পয়েন্টে ও ১ হাজার ২৯৯ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।

গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ২৪৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৭ হাজার ৮৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৪১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অপরদিক গেল সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ২৬২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। এই সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৯০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২২৪টির বা ৫৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, দর কমেছে ১৩৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির কোম্পানির। লেদনের হয়নি চার কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৫০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০১টির বা ৫৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, দর কমেছে ১২৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির কোম্পানির।

আরও পড়ুনঃ  অর্থনীতিতে ফুলের সৌরভ

গেল সপ্তাহে ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৫ হাজার ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় ‘বি’ ক্যাটাগরির ২ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, ‘এন’ ক্যাটাগরির ২৫৭ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৮৩ কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সপ্তাহে সিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৫০ কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৩ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫৯ কোটি ৫৪ লাখ ৫ হাজার ৭৮০ টাকা, ‘এন’ ক্যাটাগরির ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার ৮২ টাকা ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির ১ কোটি ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৯৮ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন