শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আকাশছোঁয়া দরে অস্থিরতা

বিএসসির শেয়ার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) শেয়ার দর আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে। কারণবিহীন গত এক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৮৯ দশমিক ৬০ টাকা। এসময় শেয়ারটির বাজার মূল্যে বেড়েছে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অস্বাভাবিকহারে এ ধরনের বৃদ্ধি নিয়ে কোম্পানির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয়। অপরদিক এ কোম্পানির শেয়ার দর কেন এতো বাড়ছে, তার প্রকৃত কারণ জানে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০টি। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধারন করেছে ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার। গত এক মাসে বিএসসির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৪ টাকা। অপরদিক এসময় প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ৬৫৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬০ টাকা।

বিএসসির শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার দর কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, জানি না। ঝামেলায় আছি। এ মুহূর্তে কোম্পানির কোনো ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। যা বলার ডিএসইকে জানিয়েছি। নতুন করে কিছু বলার নেই। আরও বলেন, পুঁজিবাজারে আমাদের (বিএসসি) কোন কর্মকর্তা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে না। শেয়ার দর বাড়া-কমা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথাও নেই। এরপর ফোনের লাইন কেটে দেন।

আরও পড়ুনঃ  তিনদিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক লেনদেন

এদিক শেয়ার দর ধারাবাহিকভাবে বাড়ার কারণে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে নোটিশ পাঠিয়েছিল। ওই নোটিশের জবাবে কোম্পানিটি গত মঙ্গলবার ডিএসইকে জানায়, শেয়ার দর এভাবে বাড়ার পেছনে কোনো কারণ নেই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত দুই বছরে যেখানে বিএসসির শেয়ার দর ৫৮ টাকার ওপরে উঠতে দেখি নাই, সেখানে গত এক মাসে শেয়ারটির দর বৃহস্পতিবার ১৩৯ টাকার ঘরে চলে এসেছে। কোন কারণ বা কোন পরিকল্পনায় শেয়ার দর এভাবে বেড়েছে তার কারণ জানা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, নিয়ম অনুসারে কোম্পানির কর্মকর্তারা শেয়ার দর বাড়া-কমার পেছনে কাজ করেন না। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোম্পানির শেয়ার দর বাড়া-কমার তাদের (কর্মকর্তা) অদৃশ্য ছোঁয়াও থাকে। তাদের ওই ছোঁয়াতে কোম্পানির শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। কারণ তারাই জানেন কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। যেসব তথ্য শেয়ার বাড়া-কমার ক্ষেত্রে জাদুকরি ভূমিকা রাখে। তাই শেয়ার দর বাড়ার জাদুকরি প্রতিষ্ঠান বিএসসির প্রতি বিশেষ নজর দিতে পুঁজিবাজার রেগুরেটরকে অনুরোধ করেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৩৯ টাকা। এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ৪৯ দশমিক ৪০ টাকা। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৮৯ দশমিক ৬০ টাকা। বিএসসির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০টি। সেই হিসাবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে হয়েছে ২ হাজার ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৬০ টাকা। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে ছিল ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৬ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে বেড়েছে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৪ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  বিঘা প্রতি ৫-৬ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে ধান চাষিদের

আরও জানা যায়, বিএসসির মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ ধারন করেছে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সেই হিসেবে এসব বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ৬৫৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬০ টাকা। এদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ধারন করা শেয়ারের বাজার মূল্যে বেড়েছে ৩৩২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৮ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩২২ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪১ টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিই ধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানান বিএসইসি। সেই হিসেবে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পিই দাঁড়িয়েছে ৫১ পয়েন্টে। মানে পিই হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে নেই বলেও জানান তারা।

সূত্রমতে, কোম্পানিটির প্রথম কোয়টারে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল) দাঁড়িয়েছে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ৪ দশমিক ৩৪ টাকা। এসময় শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) হয়েছে ৬৪ দশমিক ৬২ টাকা। নগদ প্রবাহ ৫ দশমিক ৪৪ টাকা। বিএসসির মোট শেয়ারের ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ সরকার একাই ধারন করেছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ও সাধারন বিনিয়োগকারী ২৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে। ১৯৭৭ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন