শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বোরো নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা

বোরো নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা
  • লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠে কৃষক

‘বোরো আবাদে খরচতো আগের চ্যায়া বেশি হইচে, ধানের ফির ঠিকমতন দামও পাওয়া যায় না। তয় বসি থাকলেতো চইলবার নয়-সময়মতন আবাদ না করলে হামরা কি খ্যায়া বাঁচমো।’ শৈত্যপ্রবাহসহ ঘনকুয়াশার মধ্যে বোরো ধানের চারা রোপনের জন্য জমি তৈরির সময় এমন কথা বলেন রংপুর নগরীর গিলাবাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র কৃষক নূরুল ইসলাম।

বোরো আবাদই ভরসা উত্তরাঞ্চলের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের। শৈত্যপ্রবাহ শেষ না হতেই মৌসুমের শুরুতে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখানকার চাষিরা তাই কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে এ বছর সেচ খরচও বাড়বে। সে তুলনায় বাজারে ধানের দাম কম। এতে করে বোরো আবাদসহ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শৈত্যপ্রবাহসহ শত প্রতিকূল অবস্থাতেও সময়মত বোরো ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কেউ কেউ বীজতলা থেকে চারাউত্তোলন করছেন। কেউবা শুকনো জমিতে পানি দিয়ে চারা রোপনের জন্য কাঁদা করে জমি তৈরি করছেন। আবার অনেকে একবুক আশা নিয়ে মৌসুমের শুরুতেই রোপন করছেন বোরো ধানের চারা।

কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ এলাকার চাষি আজিজার রহমান বলেন, ‘বোরোর আবাদ না করলে হামাক না খ্যায়া মরা নাগিল হয়। এবার দুই বিঘা জমিত চারা নাগাচু (লাগানো হয়েছে), আরো দুই বিঘা জমিত বোরো চাষের আশা আছিল। তয় পানির দাম (সেচ খরচ) বাড়ার কারণে আর তা হবার নয়।’ গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের বর্গাচাষি আবুল কাশেম বলেন, ‘মোর নিজের কোনো জমি নাই। প্রতি বছর বর্গা নিয়া ৪ থেকে ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করোং। এবার (এ বছর) দেড় বিঘা জমিতে চারা নাগাচু। ডিজেলের দাম বাড়ার কথা শুনি বোরো আবাদের হাউস (শখ) মিটি গেইছে।’ গত বছর বোরো চাষে সেচযন্ত্র মালিকরা প্রতিঘন্টা পানির দাম ৬০ টাকা নিলেও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে এ বছর ১০০ টাকা ঘন্টাতেও পানি মিলবেনা বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। চারারোপনের জন্য জমি তৈরি করছিলেন তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার কৃষক আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, মৌসুমে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় এমনিতে প্রতিবিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। তার উপর সেচের কারণে বোরোতে উৎপাদন খরচ বাড়লে বেকায়দায় পড়তে হবে।

আরও পড়ুনঃ  চালের বাজারে অস্থিরতার শঙ্কা

অন্যদিকে সেচযন্ত্রের মালিকরা বলছেন, আগের দামে সেচ দেওয়ার সুযোগ নেই। দু’মাস আগেও পাম্পগুলোতে প্রতিলিটার ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ৬৫ টাকা ২০ পয়সা। আর বোরো চাষ মৌসুমের শুরুতে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ২০ পয়সা দরে। প্রতিলিটারে ডিজেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলা নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বোরো ধানের বীজতলা করা হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বোরো আবাদের সময়। চারা রোপণের ভরা মৌসুম চলছে উল্লেখ করে তারা বলেন, যে হারে চারা লাগানো হচ্ছে তাতে ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ জন্য বোরো আবাদে তীক্ষè নজরদারি করাসহ চাষিদের পরামর্শ দেওযা হচ্ছে। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে গ্রামাঞ্চলে সেচের পানির দাম বেশি নিলে এ বছর বোরোতে উৎপাদন খরচ বাড়বে।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন