শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলছে জমি অধিগ্রহণ-অনুসন্ধান

ইপিজেড হবে গাইবান্ধা

নতুন করে যে তিনটি ইপিজেডের কাজ চলমান তার মধ্যে গাইবান্ধা ইক্ষু খামারে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। পটুয়াখালী এবং যশোরেও জমি দেখা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে অগ্রগতি কম হলেও বেপজা এখন পুরোদমে মনোযোগী

– নাজমা বিনতে আলমগীর, মহাব্যবস্থাপক, বেপজা

দেশে আরো তিনটি নতুন রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) গড়ে তুলতে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হবে। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অধীনে প্রস্তাবিত তিন ইপিজেড হবে গাইবান্ধা, যশোর ও পটুয়াখালীতে। যার ব্যয় করা হবে বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে।

বেপজার আওতায় বর্তমানে ইপিজেড রয়েছে আটটি। এগুলো হলো- ঢাকা, আদমজী, চট্টগ্রাম, মোংলা, ঈশ্বরদী, কুমিল্লা, উত্তরা ও কর্ণফুলী। এর বাইরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে রয়েছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেটির উন্নয়নকাজ এখন এগিয়ে চলছে। বেপজার মহাব্যবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, নতুন করে যে তিনটি ইপিজেডের কাজ চলমান তার মধ্যে গাইবান্ধা ইক্ষু খামারে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। পটুয়াখালী এবং যশোরেও জমি দেখা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে অগ্রগতি কম হলেও বেপজা এখন পুরোদমে মনোযোগী। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ইপিজেডগুলো সম্পন্ন হবে বলে আশা তার।

নতুন তিন ইপিজেড করার পেছনে বেপজা তার অবদানের তথ্যও অর্থ বিভাগের কাছে তুলে ধরে জানিয়েছে, বেপজার অধীনে থাকা ইপিজেডগুলোতে এ পর্যন্ত মোট ৯৪ হাজার ৮৫৭ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। পোশাক, জুতা ও চামড়া, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস, তাঁবু, কৃষিজাত পণ্য, মাছ ধরার বড়শি, গলফ খেলার স্টিক, খেলনা, পরচুলা ইত্যাদি খাতে এসব বিনিয়োগ এসেছে। আর ইপিজেডগুলো থেকে মোট পণ্য রফতানি হয়েছে ২১ লাখ ২২ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের। এ ছাড়া কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩১৪ জনের। বেপজা ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২০ কোটি টাকা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরেও ২০ কোটি টাকা করে দেবে বলে অর্থ বিভাগকে জানিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  হুয়াওয়ের বাজার খেয়ে ফেলছে স্যামসাং

তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি ইপিজেড করার প্রস্তাব দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বেপজার সর্বশেষ তিন অর্থবছরের উন্নয়ন চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছে অর্থ বিভাগ। এতে দেখা যায়, সংস্থাটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫০ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০২ কোটি ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

একটি জাতীয় দৈনিকে তুলে ধরা তথ্যমতে, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে ২০২০ সালে একটি আইন করে সরকার। ওই আইনের আওতায় বেপজাকেও তার উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে ৫০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

এর জবাবে বেপজা বিদায়ী বছরের নভেম্বরে চিঠি দিয়ে অর্থ বিভাগকে জানিয়েছে, সামনে তাদের যেসব কাজ রয়েছে, তাতে ৫ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা দরকার পড়বে। এর মধ্যে তিন ইপিজেড তৈরিতে খরচ হবে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ফলে তাদের তহবিলে কোনো টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে না এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেওয়া যাবে না। বেপজা অর্থ বিভাগকে আরও জানায়, গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকে তাদের স্থিতি ছিল ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের সূত্রমতে, বেপজা চিঠি লিখে টাকা দিতে না পারার কথা জানালেও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার চাইলে তারা বেশি টাকাও দিতে পারে। সে সক্ষমতা আছে বেপজার। এখন শুধু ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয় ও সময়োচিত। আর বেপজাও একটি সফল প্রতিষ্ঠান। করোনার কারণে হয়তো তিন ইপিজেড তৈরির কাজে অগ্রগতি কম হয়েছে। তবে এখন কাজটা করার ব্যাপারে বেপজার মনোযোগ বাড়ানো উচিত। আবুল কাশেম বলেন, সরকার তার প্রয়োজনে টাকা নিতেই পারে। আর ইপিজেড করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেহেতু বেপজা চাইলে যেকোনো সময় সরকার থেকে টাকা নিতেও পারবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন