শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংকটে কারাখানা বন্ধের উপক্রম

গ্যাস সংকটে কারাখানা বন্ধের উপক্রম

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগামী দুই সপ্তাহ ঘাটতি আরও বাড়বে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্যাসের চুলায় রান্না নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে ভুগছে নগরবাসী। শিল্পকারখানার অবস্থাও প্রায় একই রকম। কারখানাগুলো যেটুকু গ্যাস পাচ্ছে, তা দিয়ে কারখানা চালু করা দায়। পরিবহনে গ্যাস দিতেও হিমশিম অবস্থা।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কমেছে। সরবরাহ নেমে এসেছে অর্ধেকে। একই সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদন ক্ষেত্র বিবিয়ানায় সংস্কারকাজ চলছে। পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, সামিট এফএসআরইউর ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন এখনো মেরামত না হওয়ায় সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও এক মাস সময় লাগবে।

পেট্রোবাংলা বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুটের মতো। কয়েক মাস আগেও ৩২০ থেকে ৩৩০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা গেছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট। এতে বিদ্যুৎ, সার কারখানা, সিএনজি স্টেশন, আবাসিক, শিল্পকারখানা- সব খাতেই গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বিদায়ী বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সিএনজি স্টেশন দিনে চার ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

এক খাত থেকে কমিয়ে আরেক খাতে সরবরাহ বাড়িয়েও (রেশনিং) পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় ঢাকা মহানগর, সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক শিল্পকারখানা দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে।

আরও পড়ুনঃ  একই পরিবারের ৩ জনকে গলাকেটে হত্যা

এদিকে গ্রাহকদের সতর্ক করে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি তিতাস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, কারিগরি কারণে তিতাসের আওতাধীন ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ১২ থেকে ২১ জানুয়ারি গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্পাদনসক্ষমতার এক তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না শিল্প, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসহ শহর-গ্রামের নাগরিকেরা।

কয়েক বছর ধরেই দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন কমছে। একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে ২৩০ কোটি ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করে শেভরন। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে দিনে ১৩০ কোটি ঘনফুটের মতো করে উৎপাদন করে আসছিল তারা। এখন দিনে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন করা হচ্ছে। দিনে ১০ কোটি ঘনফুটের মতো উৎপাদন কমে গেছে।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে নোঙর করা ভাসমান দুটি টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে দিনে ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা আছে। গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে সামিটের টার্মিনালের মুরিং লাইন ছিঁড়ে যায়। মুরিং হলো একটি স্থায়ী কাঠামো, যেখানে কোনো জাহাজ বাঁধা অবস্থায় থাকে। টার্মিনালে জমানো এলএনজি থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সরবরাহ করে সামিট। এরপর থেকে সরবরাহ বন্ধ। বর্তমানে এটি মেরামতের কাজ চলছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি চালু করা হবে বলে লিখিতভাবে জানিয়েছিল সামিট।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন