শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে আধুনিকায়নের ছোঁয়া

চট্টগ্রাম বন্দরে আধুনিকায়নের ছোঁয়া
  • রেকর্ড কনটেইনার হ্যান্ডলিং
  • ওভার ফ্লো ইয়ার্ড, সার্ভিস জেটি
  • আধুনিক টাগবোট ও সুইমিং কমপ্লেক্স

আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন ও আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। ফলাফল হিসেবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ইতোমধ্যে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বন্দরের সংক্ষমতা আরও বাড়াতে সার্ভিস জেটি, ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণের পাশাপাশি নতুন টাগ বোট সংগ্রহ করেছে বন্দর। ক্রীড়াঙ্গনে অবকাঠামোগত সংকট সমাধানে প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন বাড়াতে নিজস্ব অর্থায়নে আর্ন্তজাতিকমানের সুইমিং কমপ্লেক্স তৈরি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দেশকে এর মধ্য দিয়ে সক্ষমতার বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, সার্ভিস জেটির সমস্যা সমাধানে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২২ ফুট লম্বা সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩৫টি ভেসেল পরিচালনা করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরে জাহাজের সুরক্ষা ও অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আসবে। এ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দুই হাজার ৬৫০ বর্গফুটের তিনতলা একটি অফিস ভবন, ৩ হাজার বর্গফুটের স্টিল কাঠামোর একটি ওয়্যারহাউস, ২ হাজার ১০০ কিউবিক মিটারের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার, ২২২ মিটার লম্বা ৮ ফুট উঁচু রিটেইনিং ওয়াল, রিভার ব্যাংক ও শোর প্রোটেকশন, ড্রেনেজ সিস্টেম, ৫০০ কেভির বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ১০০ ফুট উঁচু সিগন্যাল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রায় ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ৪০টি বিপি (ব্লর্ড পুল-জাহাজের শক্তির একক) ক্ষমতার একটি টাগবোট সংযোজন হয়েছে বন্দরের বহরে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন আটটি টাগ বোট রয়েছে। নতুন টাগবোটটির গভীরতা ৩ দশমিক ৭৫ মিটার এবং লম্বায় ৩৩ মিটার। ২০১৭ সালে টাগবোটটি বানানোর জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ ইয়ার্ডের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৯ সালের ৩০ জুন এ প্রকল্পের পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে সব ভেস্তে যায়। ফলে এ প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। তবে ফ্রিপোর্ট মোড় পুরাতন লেবার কলোনির জায়গায় ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড’ নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ইয়ার্ডে প্রায় ১২ হাজার কনটেইনার রাখা যাবে। এতে বন্দরের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সময়ে কনটেইনার চাপ বেড়ে গেলেও জট তৈরির সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনঃ  দেশের দুই অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা

অন্যদিকে বন্দর স্টেডিয়ামের পাশে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। এর পুরো ব্যয়ভার বহন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সোয়া একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সুইমিং কমপ্লেক্সটি। এখানে আলাদা দুইটি সুইমিংপুল রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ১২৫০ বর্গমিটার (দৈর্ঘ্যে ৫০ মিটার ও প্রস্থে ২৫ মিটার) আয়তনের প্রধান পুলে রয়েছে ৮টি লেন। যার একপাশের গভীরতা সাড়ে চার ফুট এবং অপরপ্রান্তের গভীরতা সাড়ে তের ফুট। যাতে একসঙ্গে ৮ জন সাঁতারু লো ডাইভিং দিতে পারবেন।

এছাড়া কমপ্লেক্সের প্রধান পুলের পাশে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য লম্বা ও ২০ ফুট প্রস্থের আরো একটি ক্ষুদে সুইমিং পুল। যাতে ক্ষুদে ও শিক্ষানবীশরা সাঁতার শিখতে পারবেন। যার একদিকের গভীরতা দুই ফুট ও অপরপ্রান্তে ৪ ফুট। এছাড়া পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের জন্য আলাদা আলাদভাবে ড্রেসিংরুম, শাওয়ার জোন ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। সুইমিং কমপ্লেক্সটি চালু হলে পেশাদার সাঁতারুরা যেমন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করতে পারবে। তেমনি দক্ষ ট্রেনারে মাধ্যমে সাঁতারও শিখতে পারবেন নতুনরা।

এদিকে গত ২ জানুয়ারি বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন সার্ভিস জেটি উদ্বোধন করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল বন্দরের জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিন থেকে কেনা টাগবোট কান্ডারি ৬ হস্তান্তর, ওভার ফ্লো ইয়ার্ড ও সুইমিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, বন্দরে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে ধরণা দিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। চট্টগ্রাম বন্দর মেরিটাইম সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে।

আরও পড়ুনঃ  রূপপুরে ‘পেমেন্ট’ বন্ধ রাশিয়ার

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিংপুল, টেনিস কোড ও বাস্কেট বল উদ্বোধন করা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার সুযোগ তৈরি হবে। ১ দশমিক ৩ একর জায়গার উপর ৮ লেন বিশিষ্ট সুইমিংপুলটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে সবাই সাঁতার শিখতে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘দিন দিন বন্দর সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। বন্দর কর্মকর্তা, কর্মচারি ও ব্যবহারকারীদের আন্তরিক চেষ্টা ও সহযোগিতায় বন্দর এগিয়ে যাচ্ছে, সামনে আরও এগিয়ে যাবে। বন্দরে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন হয়েছে। এতে করে বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে। জাহাজের সুরক্ষা বাড়বে, কনটেইনার জটের ঝামেলাও কমে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন