শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্পখাতে বিপ্লবে বেড়েছে অবদান

শিল্পখাতে বিপ্লবে বেড়েছে অবদান
  • কৃষিনির্ভরতা থেকে শিল্পনির্ভরতায় উত্তরণ
  • দেশে ছোটখাটো শিল্পবিপ্লব ঘটে গেছে: অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

স্বাধীনতার সময়ে দেশের অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর। সময়ের পরিক্রমায় কৃষির পাশপাশি দেশের অর্থনীতি শিল্পে নির্ভরতা বেড়েছে। সরকারি খাতের পাশপাশি বেসরকারিখাতও সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বরেছেন, দেশের শিল্পখাত যে অবস্থানে যাওয়া উচিত ছিল সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারি কলকারখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতে থাকে। ৮০-এর দশক থেকে ধীওে ধীরে এসব কারখানায় লোকসান হতে থাকে। নব্বই দশকে লোকসান বেড়ে যায়। লোকসানের বোঝা থেকে বাঁচতে সরকার আদমজীর মতো বড় পাট কলও বন্ধ করে দেয়।

এতে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধিন শিল্পকারখানা একে একে বেসরকারীকরণে উদোগ নেয়া হয়। তবে সরকারি কলকারখানার কাজ হারানো শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। তবে সরকারি কারখানায় লোকসান হতে থাকলেও লাভের হিসেবে আসতে থাকে বেসরকারিখারে এতের পর এক শিল্প। সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে এদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধন খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের ভিত্তি মজবুত হয়। এভাবে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখী হয়েছে এদেশের অর্থনীতি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পর্যালোচনা করেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিএনপি) কৃষি খাতের অবদান ছিল ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আর শিল্প ও সেবা খাতের অবদান যথাক্রমে মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৩৪ শতাংশ। স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলো পাল্টেছে। ক্রমশ শিল্প ও সেবার খাতের বিকাশ হয়েছে, যা অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো বদলে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  'হিংসাত্মক ও স্পর্শকাতর'  পোস্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা ফেসবুকের

সর্বশেষ হিসাবে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতের অবদান তৃতীয় স্থানে। সেবা খাতের অবদান শীর্ষে। গত অর্থবছরে জিডিপিতে সেবা খাতে অবদান ছিল ৫৩ দশমিক ১২ শতাংশ। আর কৃষি খাতের অবদান কমতে কমতে ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। শিল্প খাত অবদান বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালে অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। তৎকালীন সময়ে মুদ্রা বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলারে ৭ টাকা ২৮ পয়সা। সেই হিসাবে, অর্থনীতির আকার দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরে স্থিরমূল্যে দেশের অর্থনীতি বা জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

১৯৭২ সালে প্রথমার্ধে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। ওই বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি পুননির্মাণ’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্বব্যাংক। প্রথম খাতে ছিল সামষ্টিক অর্থনীতির পর্যালোচনা এবং দ্বিতীয় খণ্ডটি যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। শিল্প খাতের অবদান কয়েক গুণ বেড়েছে। শিল্প বিপ্লবের ৮০ বছরে ইংল্যান্ড জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২০ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশে উন্নীত করেছিল। সেই হিসাবে বলা যায়, বাংলাদেশেও একটি ছোটখাটো শিল্পবিপ্লব হয়েছে। তাঁর মতে, কৃষি খাতের অবদান কমলেও শিল্পখাতে উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। জনসংখ্যা বাড়লেও এজজন্য খাদ্যঘাটতি হয়নি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন