শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাত্তরে মানসিক ক্ষতি কল্পনাতীত

‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/ কারোর দানে পাওয়া নয়/ দাম দিছি প্রাণ লক্ষ-কোটি/ জানা আছে জগতময়।…গানটি শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। মনের ভেতর ৫০ বছরের সেই প্রশ্নের তোলপাড় হয়। স্বাধীনতার জন্য কতটা দাম দিতে হয়েছে আমাদের? খ্যাতনামা গীতিকার ও সুরকার আব্দুল লতিফ তার গানে ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান অবধি দেয়া দামের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তবে সেই ইতিহাস বাদ দিলে আজ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর আবারো প্রশ্ন জাগে মনে, আমাদের মহান স্বাধীনতার মূল্য কত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দৃষ্টি দিতে হবে একাত্তর পরবর্তী নানা নথিপত্র আর তৎকালীন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের দিকে।

যুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে লেখা হয়েছিল, ‘কোনো কোনো শহরে যেন পারমাণবিক আক্রমণ চালানো হয়েছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সবকিছু। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৬০ লাখ বাড়ি-ঘর। এক লাখ ৪০ হাজার কৃষক তাদের লাঙল-জোয়াল ও গবাদি পশু ফেলে চলে গেছে। যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। সড়কসমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত, সেতু ভেঙে গেছে, জলপথ বন্ধ। পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা সব অর্থ নিয়ে গেছে। আর্মিরা সব নোট ও মুদ্রা পুড়িয়ে দিয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্যায়নও আমরা পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তার এক ভাষণের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু সেই ভাষণে বলেছেন, পাকিস্তানিরা সব পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ব্যাংকে একটি কানাকড়িও রেখে যায়নি। আমাদের সবকিছু শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এ জন্য বিশ্বের মানবিক মানুষের কাছে আবেদন আপনারা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করুন।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানের মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি লন্ডনভিত্তিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘সদ্য আবির্ভুত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে প্রয়োজন সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। দেশটি পুনর্গঠনের জন্য যে মেধা এবং বিশেষজ্ঞ দরকার তা তাদের নেই।’ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, যুদ্ধপরবর্তী সারাদেশের মানুষের হাতে ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকার মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য কোনো অর্থকড়ি ছিল না। সবকিছু লুটপাট করে তারা পাকিস্তানে পাচার করে। বাকিগুলো পুড়িয়ে ফেলে। শুধু পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স চট্টগ্রামের পোর্টসিটি তাদের একাউন্টে ১৬ ডলার রেখে যায়।

জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশনস ঢাকা (ইউএনআরডি-আনরড) সে সময় মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি ও মেরামত সম্পর্কে জরিপ পরিচালনা করে। সেই কাজে যুক্ত ছিলেন ঢাকায় জাতিসংঘ সাহায্য সংস্থার বিশেষ উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ বিশেষজ্ঞ সুরেন্দ্র কুমার দে (এস কে দে)। জরিপে তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৩০ কোটি টাকা। তবে জরিপ করে এস কে দে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির যে পরিমাণ লেখেন তা বাংলাদেশ সরকারের পরিচালিত জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনের সমপর্যায়ের। সরকারের পরিচালিত জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। জরিপের এই ফলাফল উল্লেখ করে ১৯৭২ সালের ২৭ অক্টোবর প্রতিবেদন তৈরি করে দৈনিক ইত্তেফাক। যদিও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব হিসেবে সেটাকে ধরা হয় না। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কোনোভাবেই সহজ ছিল না।

আরও পড়ুনঃ  সৈয়দপুরে দীর্ঘ লোডশেডিং

আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ বিশেষজ্ঞ এস কে দে তখন বলেছিলেন, ইউএনআরডি পরিচালিত জরিপে শুধুমাত্র হিসাবযোগ্য ক্ষয়ক্ষতিই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লেজার ও ঘটনাস্থলে ক্ষয়ক্ষতি দেখে যতটুকু পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব শুধু সেগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোর পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব নয় বলে তা বাদ দেয়া হয়েছে। সেই জরিপে সাতটি সেক্টরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৯২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। গবাদিপশু, খাদ্য ও মৎস্য বিভাগসহ কৃষিক্ষেত্রে ৪২৯ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাস্তব ও সামাজিক অবকাঠামোতে ৩০০ কোটি টাকা ও পরিবহনের ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি দেখানো হয়।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির কিছু হিসাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে যখন ঢাকা মুক্ত হলো, তখন আমরা পেলাম এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেউলিয়া অর্থব্যবস্থা। রেলপথ, সড়ক ও নদীসমূহ তখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন; নিমজ্জিত জাহাজ ও ভাসমান মাইন দিয়ে বন্দরসমূহ বন্ধ; শিল্পসমূহে শত্রুর আঘাতে বিধ্বস্ত, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত; যন্ত্রপাতি আর কাঁচামালের অভাবে কলকারখানা স্তব্ধ।’

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) পুনর্গঠন ও উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক ব্যাংকের এক হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ উঠে আসে। সংস্থার পক্ষে ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ও ২০ নভেম্বর প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন থেকে এই বিষয়ে জানা যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন তৈরি করেন বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন পরিবহন অর্থনীতিবিদ টিলম্যান নিউনার। সারাদেশ সরেজমিন ঘুরে তিনি প্রতিবেদন তৈরি করেন। জাতিসংঘের আওতায় তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সেইলরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ১৯৭২ সালের মার্চ-এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করে। টিলম্যানের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের সময় পরিবহন খাতে গাড়ি, রেল, জাহাজসহ অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি ডলার (১৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা)। সে সময় ডলারের দাম ছিল মাত্র সাত টাকা ২৮ পয়সা।

আরও পড়ুনঃ  শেষ পর্যায়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ, আগামী জুনেই উদ্বোধন

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যানবাহন, নৌকা, জাহাজের ক্ষতি ছাড়া শুধু অবকাঠামোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। যুদ্ধের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাস ও ট্রাক মেরামতেই খরচের পরিমাণ ৫ কোটি ডলার। জাহাজ ও নৌকার ক্ষতি হিসাবের বাইরে ছিল। দুটি বড় রেলসেতু ধ্বংসের কারণে দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত। বাস ও ট্রাকের অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ১৯৭০ সালের হিসাবে সে সময় ১০ হাজারের কম ট্রাকের ধারণক্ষমতা ছিল ৬৫ হাজার টন। যুদ্ধের সময় সাড়ে চার হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৯৫টি রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর ৮২টি পুরোপুরি পুনর্নির্মাণ এবং ১৯৮টি সেতু সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সেতুর সংখ্যা ১৭৫। যুদ্ধের পরপরই মাত্র ৮০ সেতু মেরামত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধেকালে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধে শুধু সরকারি খাতে বস্তুগত মূলধন ও দ্রব্যসামগ্রীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ২৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছিল ৩৭৬ কোটি টাকা। ব্যবসায়-বাণিজ্যে ক্ষতি দাঁড়িয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। তার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু, পঙ্গুত্বকরণ, ব্যক্তি মালিকাধীন ঘর-বাড়ি, পরিবহন, শিল্প, বিদ্যুৎ, যুদ্ধের কারণে উৎপাদনমূলক কাজ বন্ধ, কৃষি ফসল ইত্যাদি সংযুক্ত করা হলে ক্ষতির পরিমাণ অকল্পনীয় হয়ে দাঁড়াবে। পরিবহন, বিদ্যুৎখাতে ক্ষয়ক্ষতির তুলনামূলক একটি তালিকা করা হয়। সেখানে পুনর্গঠনের মূল্যের ভিত্তিতে শতকরা হিসেবে বলা হয়, পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তার পরিমাণ ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ৭ শতাংশ, শিল্পখাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সে সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রধানত পশ্চিম পাকিস্তানের মালিকদেরই ছিল। বাংলাদেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল ৩১৩২টি।

‘বঙ্গবন্ধুর শাসন আমল’ নামের একটি বইয়ে লেখক হাসানুর রশিদও ‍মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেসব তথ্যের বেশিরভাগই নানাভাবে পরিচালিত জরিপ থেকে সংগ্রহ করা হয়। হাসানুর রশিদ উল্লেখ করেন, পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের সহযোগিরা ৪৩ লাখ বসতবাড়ি, ২৫ হাজার স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ভবন, ৩ হাজার অফিস ভবন ও ১৯ হাজার হাটবাজার পুড়িয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধে কৃষিখাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। যদিও সে সময় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই ছিল কৃষি। জাতীয় অর্থনীতির ৫৫ হতে ৬০ ভাগ ছিল কৃষিভিত্তিক। হানাদাররা মাইলের পর মাইল আগুন দিয়ে ফসল জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। তাতে জাতীয় উৎপাদনের ৩০ শতাংশ সম্পদ বিনষ্ট হয়। তখন পাটজাত পণ্য রফতানিতে ৩০০ হতে ৪০০ মিলিয়ন টাকা আয় হতো। পাটের গুদাম ধ্বংস, পাটকলের ক্ষতি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র অকোজো হয়ে যায়। চা রফতানি খাতও বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১-৭২ চাবর্ষে উৎপাদন নেমে আসে ২৬ মিলিয়ন পাউন্ডে।

আরও পড়ুনঃ  লকডাউন নয়, জনসচেতনা জরুরি

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত তার ‘বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ’ বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের মধ্যে ২৫ লাখই গ্রামের মানুষ। বাকি পাঁচ লাখ ছাত্র-শিক্ষক-যুবক রাজনীতিবিদ-কারখানার শ্রমিকসহ অন্যান্য মানুষ। গ্রামের লোকেরা কৃষিতে সম্পৃক্ত। যুদ্ধের নয় মাসে তারা কৃষিখাতে যুক্ত থাকতে পারেনি। ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তারা বেঁচে থাকলে ৩৫-৪০ বছর অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারতো। জীবিত ৫২ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে যুক্ত থাকতে পারেনি। ১৯৭০ সালে দেশজ মোট উৎপাদন ছিল ১৮৮৮ কোটি ডলার, ১৯৭২ সালে তা নেমে আসে ১৫৩৫ কোটি ডলারে। এতে ৩৫৩ কোটি ডলার কমে যায়’।

বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের (মুজিবনগর সরকার) মন্ত্রিপরিষদ সচিব হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) তার ‘বাংলাদেশ সরকার, ১৯৭১-৭৫’ বইয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে লেখেন, সরকারি খাতে বস্তুগত মূলধন এবং দ্রব্যসামগ্রীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কৃষিখাতে ৩৭৬ কোটি টাকা, ব্যবসায়-বাণিজ্যে ১০০ কোটি টাকা। তা ছাড়া ৩০ লাখ মানুষের জীবননাশ, পঙ্গুত্ব, ব্যক্তিমালিকানাধীন ঘর-বাড়ি ধ্বংস, মানসিক ক্ষতির পরিমাণ কল্পনাতীত।

একাত্তরে পাকিস্তানের পোড়ামাটির নীতির ফলে জান্নাতাবাদ খ্যাত বাংলা (বাংলাদেশ) পরিণত হয়েছিল জাহান্নামে। ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট সবকিছু পুড়িয়ে, ভেঙে তামা তামা করে ফেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানিদের এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে আজ ৫০ বছর পর সুজলা সুফলা বাংলাদেশ পেয়েছি। তবে ভয়াবহতা কখনও ভুলতে পারবে না বাঙালি জাতি। ভুলতে পারা যাবে না ধ্বংসলীলার চিত্র।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যমাণ ক্ষয়ক্ষতিটা হয়তো টাকার অংকে মাপা যেতে পারে, তবে সম্ভ্রম আর মানসিক ক্ষতির পরিমাণ জানা কিংবা পরিমাপ করার কোনো মাপকাঠি নেই। তারপরও খ্যাতনামা গীতিকার আব্দুল লতিফের গানে আমরা বাংলাকে কেনা কিংবা দাম দিয়ে স্বাধীনতাকে কেনার কথা ভাবি। যে দাম দিতে হয়েছে একাত্তরে সেই দাম কি কখনও পরিশোধ করতে পারবো আমরা? শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে সেই প্রশ্নই আমাদের তাড়িত করবে, অনুপ্রাণিত করবে, গর্বিত করবে স্বাধীন জাতি হিসেবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন