শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতি

বিগত দিনগুলোতে অক্সিজেনের অভাবে অসংখ্য চিকিৎসাধীন রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ভারতের হাসপাতালগুলো। টানা তিন দিনের মতো ভারতে রেকর্ড সংখ্যক কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যাও রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে বিগত তিনদিনেই প্রায় ১০ লাখ মানুষ করোনাভাইরাস শনাক্ত হন, শনিবার ২৪ ঘণ্টার হিসেবে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬।

দিল্লির জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালটিতে এক রাতেই ২০ জন রোগী মারা গেছেন। অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করতে বিমান বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।

শনিবার এর আগের ২৪ ঘণ্টার হিসেবে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬২৪। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ২ হাজার ২৬৩ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাস কতোটা ভয়াবহ হতে পারে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিই আমাদের তা মনে করিয়ে দেয়।

এ বছরের শুরুর দিকে ভারত সরকার করোনাভাইরাসকে পরাজিত করেছে এমন মন্তব্য করে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারে নেমে আসে। ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচীও শুরু হয়ে যায় ততোদিনে। মার্চে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানায়, ভারত মহামারির ‘এন্ডগেম’ পর্যায়ে আছে।

তবে, তার কিছুদিন পর থেকেই আবারও করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ভাইরাসের অধিক সংক্রামক নতুন ধরন, কুম্ভমেলার মতো গণ জমায়েত এসব বিভিন্ন কারণেই সংক্রমণের নতুন ওয়েভ আঘাত হানে দেশটিতে। দিল্লির হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে, তারা মহামারি সামলাতে ইতোমধ্যে সক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুনঃ  যুক্তরাষ্ট্রে সশস্ত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা, সব অঙ্গরাজ্যে সতর্কতা

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের আইসিউ শয্যা খালি নেই, নতুন কোভিড রোগী ভর্তির জন্যও শয্যা খালি নেই।

ডা. সুমিত রয় বিবিসিকে বলেন, “প্রায় সব হাসপাতালেই ধারণক্ষমতার সম্পূর্ণ রোগী ভর্তি আছে। অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে অনেক রোগীর জন্যই আর করার কিছু থাকে না,”

“কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাদের। ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হওয়া রোগীদের হাই-ফ্লো অক্সিজেন দরকার হয়। অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলেই মারা যাচ্ছেন তারা,” যোগ করেন তিনি।

আর মাত্র ৩০ মিনিট পরই জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন প্রয়োজন এমনটা জানিয়ে আরেকটি হাসপাতাল এসওএস বার্তা প্রেরণ করেছে। মুলচান্দ হাসপাতালে ১৩৫ জন রোগী লাইফ সাপোর্টে আছেন, ওই অঞ্চলের বাকি হাসপাতালগুলোও একই পরিস্থিতিতে আছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।

মুলচান্দ হাসপাতালের মেডিক্যাল পরিচালক মাধু হান্দা এনডিটিভি নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেন, “যতো বেশি সংখ্যক রোগীর জীবন বাঁচানো যায় তা নিশ্চিত করতে আমাদের নাইট শিফটের স্টাফরাও অন্য সময়ে অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন,”

“চিকিৎসা উপকরণের সরবরাহ সঠিক সময়ে হবে এমনটাই আশা আমাদের, কিন্তু এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। এবং ব্যাপারটি নিত্যদিনকার, প্রতিদিনই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।

এ সমস্যা সমাধানের আগ পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতালটি।

জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিবিসিকে জানান, সরকার ৩.৬ টন অক্সিজেন বরাদ্দ দেয় যা শুক্রবার বিকালের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছানোর কথা ছিল।

কিন্তু, ওই পরিমাণের খুবই অল্প পরিমাণ অক্সিজেন পাঠানো হয়, তাও মধ্যরাতে।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক-চামড়া খাত

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গত শুক্রবার টেলিভিশনে লাইভে এসে অক্সিজেন সরবরাহের আকুতি জানান, খবর বার্তাসংস্থা রয়টার্সের।

“সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সরকারের শীঘ্রই দেশের সব অক্সিজেন প্ল্যান্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া উচিৎ,” লাইভে বলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের পরিবারের সদস্যদের অক্সিজেনের আকুতিতে সয়লাব।

দক্ষিণ ভারতের ভেলোর শহরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজের একজন ভাইরোলজিস্ট গগনদ্বীপ কাং বিবিসিকে বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।

“মহামারি মোকাবেলায় প্রয়োজনের বাইরে সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। ভারতের বিয়ের অনুষ্ঠান কেমন হয়ে থাকে তা জানে সবাই; পারিবারিক কারণে হোক বা অন্যান্য সামাজিক কারণেই হোক, ব্যবসায়িক প্রয়োজন কিংবা রাজনৈতিক র‍্যালি- সবক্ষেত্রে গণ জমায়েত বন্ধ করা প্রয়োজন,” বলেন তিনি।

“আমি মনে করি না দেশব্যাপী লকডাউন প্রয়োজন। বরং যে সব স্থানে সংক্রমণের হার বেশি, সেসব স্থানে আগের চেয়েও বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি

আণোণ্ডবাজাড়/ষোহোক 

সংবাদটি শেয়ার করুন