নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে কুয়াকাটার অলঙ্কারখ্যাত রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁত শিল্প। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঁচামাল ও উপকরণের দামবৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রচালিত তাঁতের বিপরীতে সক্ষমতার ঘাটতি, বাজার সংকপ্ট, বিপণন ব্যর্থতা, পুঁজি সংকট ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের অভাবে বন্ধের উপক্রম সম্ভাবনাময় এই শিল্প।
মূলত এ পেশায় নিযুক্ত সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইন পল্লীর নারীরাই। তাদের নিপুণ শৈলীতে প্রস্তুত তাঁতবস্ত্রের চাহিদা একসময় দেশজুড়ে ছিলো। তবে এখন সংকটে পড়ার কারণে পেশা বদলের চিন্তা করছেন অনেকেই।
জানা যায়, এককালে দম ফেলার ফুরসৎ ছিল না রাখাইন পল্লীর তাঁতিদের। দিন-রাত তাঁতের খটখট শব্দে মুখর ছিল উপকূলীয় অঞ্চলের কেরাণীপাড়া, মিশ্রিপাড়া, কালাচাঁনপাড়া, আমখোলাপাড়া, দিয়ারআমখোলা পাড়া, বৌলতলীপাড়া, থঞ্জুপাড়া, লক্ষ্মীপাড়া, মেলাপাড়া, মংথয়পাড়া, নাইউরীপাড়াসহ প্রতিটি রাখাইন পাড়া। তবে এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই। কাজের অভাবে, লোকসানের কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানাগুলো। যে গুটিকয়েক কারখানা এখনও কোনোমতে টিকে আছে, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা আর আর্থিক অনটনে সেগুলোরও এখন নিভু নিভু দশা।
থঞ্জুপাড়ার মাচান রাখাইন নামে এক নারী জানান, অর্থনৈতিক সংকট, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পর্যটকরাও আগের মতো তাঁতের কাপড় কেনেন না। এসব কারণে পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কারিগররা।
এ পাড়ার আরেক বয়স্ক নারী মামা রাখাইন জানান, আগে এক বান্ডিল সুতা কিনতাম ৩০০ টাকায়। সেই সুতা এখন ৫০০ টাকা। নিত্যনতুন ডিজাইনও করতে পারি না প্রশিক্ষণের অভাবে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো উৎপাদন নেই। এভাবে চলতে থাকলে তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কুটির শিল্প পটুয়াখালীর সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে রাখাইন তাঁত শিল্পে জড়িত কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ডিজাইনসহ ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্র প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আনন্দবাজার/টি এস পি