২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের কাছে নিরাপদ সুপেয় পানি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ লক্ষ্য থেকে এখনো অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ।
সরকারি সংস্থার তথ্য বলছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিরাপদ সুপেয় পানি সুবিধার আওতায় এসেছে মাত্র ৪৮ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ৫২ শতাংশ মানুষই এ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম গতকাল এক ওয়েবিনারে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯’ প্রতিবেদনের এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
বিবিএসের ওই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রায় ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের খাবার পানি গ্রহণের সুবিধা থাকলেও তার প্রায় অর্ধেকই অনিরাপদ। এছাড়া সাবান ও পানির মাধ্যমে হাত ধুতে পারে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার। মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আছে ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার।
পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন বিষয়ক ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. শামসুল আলম বলেন, গত এক দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বিনিয়োগ কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এ খাতে সার্বিকভাবে বিনিয়োগ ছিল ২৬ বিলিয়ন টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০৭ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
ফলে এ খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। সামনের দিনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় খাতটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আরো বিনিয়োগ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) গোল-৬-এর সঙ্গে ওয়াশ খাতটি জড়িত উল্লেখ করে ড. শামসুল আলম বলেন, নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পানির সংকট থাকে। এ সময়ে পানির দুষ্প্রাপ্যতা ও সংকট মোকাবেলায় শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান নেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে পানি আছে অনেক। কিন্তু সেই পানি সুপেয় কিনা সেটি বড় কথা। কভিড এসে স্পষ্ট করেছে হাত ধোয়াটা কতটা জরুরি।
খাদ্য পাওয়া যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, তেমনি পানি ও স্যানিটেশনও মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন নিয়ে সুনির্দিষ্ট অনেক পদক্ষেপ রয়েছে। যেমন, রেইন ওয়াটার হারভেস্ট, আর্সেনিকমুক্ত পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, নদীগুলোতে জলাধার সৃষ্টি করা এবং পানির মান বাড়ানো হবে।
গ্রামগুলোতে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া উন্নতমানের পায়খানা স্থাপন করা হবে। পানির দাম নির্ধারণে কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে এ সার্বিক উন্নতি করতে হলে সরকারি-বেসরকারি-এনজিও সবার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের টাকার অভাব নেই। তবে এখন থেকে লক্ষ্যভিত্তিক অর্থ ব্যয়ের দিকে যাচ্ছে সরকার। অর্থ ব্যয় কোথায় হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে। এর মধ্যে প্রধান টার্গেটে থাকবে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন। উন্নত দেশের প্রধান পরিচয় হবে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ।
এ দুটি সঠিকভাবে পেলে আমরা নরওয়ের সমান হতে পারব। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের অর্থ খরচের টার্গেট নিয়ে নানা ঝামেলা হয় অনেক সময়। নানা ধরনের চাপ থাকে। এজন্য একরাতেই ওয়াশ খাতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু সরকার বরাদ্দ বাড়াচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি হাওড় এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। স্যানিটেশনের জন্যও প্রকল্প হচ্ছে।
সূত্র : বণিক বার্তা
আনন্দবাজার/ইউএসএস