ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে ধর্ষণ কমবে না

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে ধর্ষণ কমবে না বলে মতামত দিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল- ২০০০’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলটি পাসের প্রক্রিয়া চলার সময় জাতীয় পার্টি (জাপা), বিএনপি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাব তুলে খসড়া আইনটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে ধর্ষণের ঘটনা, অনেক ঘটনার পর সারা দেশে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। মানুষ ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ থেকে সমাবেশ করেছে তার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মন্ত্রিসভায় এই আইনে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়।

আরেকটি বিষয় ধর্ষণকারী ও শিকার উভয়ের ডিএনএ টেস্ট বাধ্যতামূলক। সম্মতি ছাড়াই করা হোক। আগের আইনেও ডিএনএ সুযোগ ছিল, আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে করা যেত। এই যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা সরকারি ব্যয়ে করা হবে? না অভিযুক্ত বা অভিযোগকারীকে ব্যয় বহন করবে-তা পরিষ্কার না।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, অত্যন্ত ভালো ও জরুরি আইন। কিন্তু আইনে ব্যত্যয় ঘটেছে। অর্ডিন্যান্স যখন আইন হয় হুবহু বিলটা হতে হয়। কিন্তু কমিটি থেকে ঘুরে এসে কীভাবে সংশোধনী.. সেটা মূল আইনের সংশোধনী। অর্ডিন্যান্স আইনে হলে হুবহু হবে। সংশোধন আনতে হলে পরে আনতে হবে।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, নারীদের দুর্ভাগ্য পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশ নয়, এখন নারী বিদ্বেষী সমাজ। বলা হয়, ধর্ষণ হলে নারীর সম্ভ্রম হারিয়ে গেছে, কিন্তু হারানোর কথা পুরুষের। অনেক নারী মুখ খুলতে চায় না পরিবার ও সমাজের চাপে। যে চোখে সমাজ দেখে, মামলা উঠলে যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মামলা করতে চায় না। যে কারণে মামলা কম। যেগুলো হয় সাজার হারও খুব কম। ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে সাজা হয়। ৯৭ শতাংশ ছাড়া পাচ্ছেন। বর্তমানে যখন পারছি না, সাজা বাড়িয়ে কতটুকু করতে পারব সে প্রশ্ন করা যায়? মাদকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে কিন্তু তাতে কি মাদক ব্যবহার কমেছে?

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ধর্ষণ ঘটছিল, কিছু আন্দোলন হল। অর্ডিন্যান্স করলেন। কোনো দরকার ছিল না। ইমেডিয়েট অ্যাকশন যখন প্রয়োজন তখন অর্ডিন্যান্স। এই আইন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার দরকার ছিল। ম্যারিটাল রেপ চলে আসছে। অনেক স্ত্রী বাড়িতে শিকার হয়। সেম সেক্স, পুরুষ শিশুকে ধর্ষণ করলে কী হবে- সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।

স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, আল্লামা আহমদ শফিকে তেঁতুল হুজুর বানানো হয়েছে। তো সেই তেঁতুল তত্ত্বের যদি প্রচলন করা যায়, তবে ধর্ষক বাড়বে না। নারীবাদীরা সব কিছু উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। এজন্য কঠোর আইন করার আগে ধর্ষণ যাতে না বাড়ে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে বিলটি গত ৮ নভেম্বর সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।

গতকাল সোমবার সেই প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

ধর্ষিতা শব্দটি লিঙ্গ বৈষম্যের পরিচায়ক বলে বিভিন্ন সময় মত আসার প্রেক্ষাপটে বিলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ দিয়ে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

মূল আইনের ৯ (২) ধারাসহ কয়েক জায়গায় ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দটি বসছে।

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে সরকার আইনটি সংশোধনের পদক্ষেপ নেয়।

সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংশোধিত আইন কার্যকর করতে গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০০’ জারি করেন।

পরে ৮ নভেম্বর নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশটি সংসদে তুলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একই দিন সেটি বিল আকারে সংসদে তোলা হয়।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় বলা ছিল, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

সূত্র: জাগো নিউজ

আনন্দবাজার/ইউএসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন