অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা হলেও বৃদ্ধি পাচ্ছেনা আমদানি বাণিজ্য। এমনকি প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির এলসিও খোলা হচ্ছে না। যদিও রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্সের মাধ্যমে নানা দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ঠিকই দেশে আসছে।
ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও হচ্ছে না শিল্পায়ন। সেই সাথে নতুন কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় নতুন করে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থনীতির সূচক অনেক সচল হচ্ছে, শুধু আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। বেশ কয়েক মাস ধরে আমদানিতে আমন স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য, যা গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি হয়েছিল এক হাজার ৩২৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য।
করোনার পূর্বে প্রতিমাসে পণ্য আমদানিতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হলেও বর্তমানে তা ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতে করে বিনিয়োগে ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, এভাবে মাসের পর মাস টানা আমদানি কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য সেটা কখনই ভালো লক্ষণ নয়। তিনি মনে করেন, আমদানির এই দৈন্যদশার ব্যাপক প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক বিনিয়োগে। আর এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট ) নানা পণ্য আমদানির জন্য ৭৩৬ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরের ওই দুই মাসে ৯৫০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এই হিসাবে দুই মাসে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৯৯ কোটি ২৮ লাখ ডলারের। এই বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তা ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য হতে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১৮ শতাংশ। গেল বছরের একই সময়ে যেখানে ৮৯৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল, যা চলতি বছরের একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৩৬ কোটি ডলারের এলসি।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে