সরকার পুনর্নির্ধারণ করে দেয়ার পরও দেশের কোথাও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু। সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল শুক্রবার তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখনও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সে হিসেবে নির্ধারিত খুচরা দরের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, হিমাগারগুলোতেও সরকার নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। তবে কাদের স্বার্থে আলুর দর পুনর্নির্ধারণ করা হলো? এসব প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, গত কয়েক বছর ধরে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আলুর দাম পাননি। এবার চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে। আর হিমাগারে রাখা সিংহভাগ আলুই কৃষকের। তাই কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করেই আগের নির্ধারিত দাম থেকে সরে আসা হয়েছে। আলুর দাম বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হিমাগারে প্রান্তিক কৃষকের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করার মতো কোনো আলু নেই। যা আছে তা বীজআলু। কারণ, প্রান্তিক কৃষকেরা এতই গরিব যে, তারা ঋণ করে চাষাবাদ করেন। ফলে নতুন আলু ওঠার পরপরই তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা এই আলু কিনে হিমাগারে মজুত রাখেন।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু উত্পাদনে খরচ হয় আট টাকা ৩২ পয়সা। মৌসুমের সময় ক্রয়মূল্য, হিমাগার ভাড়া ও অন্যান্য সব খরচ মিলিয়ে হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ১৮ টাকা ৯৯ পয়সা। গত ৭ অক্টোবর হিমাগার পর্যায়ে কেজি প্রতি ৪ টাকা মুনাফা ধরে আলুর দাম নির্ধারণ করা হয় ২৩ টাকা। শতাংশের হিসাবে এতে মুনাফা দাঁড়ায় প্রায় ২১ শতাংশে। কিন্তু হিমাগার মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে গত ২০ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদফতরের সঙ্গে বৈঠক করে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দর পুনর্নির্ধারণ করেন।
এবার হিমাগার পর্যায়ে কেজি প্রতি আলুর দর নির্ধারণ করা হয় ২৭ টাকা। অর্থাৎ আগের নির্ধারিত দরের চেয়ে কেজিতে আরও চার টাকা বেশি। শতাংশের হিসেবে যা দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে। পুনর্নির্ধারিত অতিরিক্ত মুনাফার হিসাবে শুধু হিমাগার পর্যায়েই বাজার থেকে অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মাত্র ১০ লাখ টন আলুর মুনাফার হিসাবে এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে।
এই হিসেবে পাইকারি পর্যায়েও নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। একইভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বাজার থেকে। সবমিলিয়ে আলুর এই সিন্ডিকেট থেকেই কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর আলুর বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকেরা। এখন তো প্রান্তিক কৃষকের হাতে আলু নেই। আলুর দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ, শ্রমিক তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দরেই ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করতে হবে।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস