শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদী শাসনে অনুমোদনহীন উপকরণ ব্যবহার করছে চীনের ঠিকাদার

দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদী শাসনের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। নদী শাসনে ড্রেজিং ছাড়াও ফেলা হচ্ছে বালিভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ, পাথর, সিসি ব্লক ইত্যাদি। কিন্তু এ কাজে অনুমোদনহীন জিও টেক্সটাইল উপকরণ ব্যবহার করেছে ঠিকাদারি ওই প্রতিষ্ঠান। চুক্তির শর্ত অমান্য করায় এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং সেতু কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নদী শাসন অংশের বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এজন্য নদী শাসন প্যাকেজের মেয়াদের সময় দ্বিতীয় দফা বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনার কারণে প্রকৃতপক্ষে কবে নাগাদ এ কাজ শেষ হবে তা নিশ্চিত নয় ঠিকাদার, পরামর্শক বা সেতু কর্তৃপক্ষ কেউই।

পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি সেতু বিভাগে এ প্রতিবেদন জমা দেয় যৌথভাবে ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেন্ডাল লিমিটেড, বাংলাদেশের বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড এবং জাপানের পাডেকো কোম্পানি লিমিটেড এবং কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদী শাসনে নানা কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে নদী ড্রেজিং, নদীর তীরে বালিভর্তি ৮০০ কেজির জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা, বালি ভর্তি ১২৫ কেজির জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা, বড় আকারের পাথর ফেলা, পাথরের তৈরি সিসি ব্লক ফেলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন নদী শাসনে অনুমোদনহীন জিও টেক্সটাইল উপকরণ ব্যবহার করেছে।

আরও জানা গেছে, চুক্তির শর্তানুসারে উপকরণ ব্যবহার না করায় তা নিয়ে আপত্তি ওঠে। তাই চুক্তিতে উল্লিখিত জিও টেক্সটাইল ব্যাগের গুণাগুণ এবং নতুন জিও টেক্সটাইল উপকরণের গুণাবলি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা প্রমাণ করতে হবে ঠিকাদারকে। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে সনদ সংগ্রহের সুপারিশ করেছে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কনসোর্টিয়াম। যদি যুক্তরাষ্ট্রের সনদে জিও টেক্সটাইল উপকরণের গুণাবলি যথাযথ না পাওয়া যায় তাহলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নদী শাসনে পুনরায় ক্ষতিপূরণমূলক বাড়তি কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ২৬ দিনেই সরকারের ঋণ  ৬০০০ কোটি টাকা 

সূত্রমতে, নদী শাসন প্যাকেজের চুক্তি সই করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এক্ষেত্রে চার বছরের মধ্যে প্যাকেজটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। সে হিসাবে নির্ধারিত সময় শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে তা বাড়িয়ে চলতি বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। বর্ধিত সময় শেষে নদী শাসন কাজের অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও প্রায় ২৪ শতাংশ পিছিয়ে আছে নদী শাসন।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের কাজে বিলম্ব করার জন্য চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনের পুরোনো অনেক দুর্নাম রয়েছে। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ৭টি প্যাকেজের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে কোম্পানিটি। ওই প্রকল্পে মোট ১০ প্যাকেজের মধ্যে অপর তিন প্যাকেজের কাজ দ্রুত শেষ হলেও সিনোহাইড্রোর অংশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়াতে হয়েছিল। ার তাই বাস্তবায়ন বিলম্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ব্যয় তিন দফা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

আনন্দবাজার/এইচ স কে

সংবাদটি শেয়ার করুন