বিশ্বজুড়ে চলছে মরণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী। বিধ্বংসী এই করোনা নানা দেশে তান্ডব চালিয়ে হানা দিয়েছে বাংলাদেশেও। আর করোনার এই মাতামাতির মাঝে খুব নীরবেই মাথাচারা দিয়ে উঠতে শুরু করেছে ডেঙ্গু।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। এ বছরের প্রথম তিন মাসের ডেঙ্গু আকান্ত রোগীর সংখ্যা ডেঙ্গুর মারাত্বক আকার ধারণ করার আশঙ্কা তৈরি করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মার্চের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৯ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬৫ জন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ জন। গত বছর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ জন। অর্থাৎ এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ গুণ।
এবছর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্বও তুলনামূলক বেশি। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখনই আগাম পদক্ষেপ না নেয়া হলে এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। করোনার মাঝেই ঘনিভূত হতে পারে সংকট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সম্প্রতি রাজধানীর ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি পয়েন্ট থেকে এডিসের লার্ভা সংগ্রহ করে। সেখানে গত বছরের চেয়ে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, মৌসুম শুরুর আগে ডেঙ্গু আক্রান্তের এ সংখ্যা উদ্বেগজনক। বৃষ্টি হবার পরেই কিন্তু পাত্র তৈরি হয়ে গেছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকাতে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে এডিস মশা বাড়া শুরু করবে। বৃষ্টি বাড়বে এডিস মশার ঘনত্বও বাড়া শুরু করবে। যদি আগাম পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে এবারও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবছর জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনার পাশাপাশি তাই ডেঙ্গু মোকাবেলা করাও প্রয়োজন, এমনটা না হলে দেখা যাবে করোনাকে প্রতিরোধ করতে যেয়ে আমরা ডেঙ্গুকে ভুলে গেলাম আর সেখানে অনেক ডেঙ্গুরোগী হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, যারা এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন তারা যেন এদিকে নজর দেন। আর যারা করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন, তারা সেদিকেই নজর দেন। দুই টিম দুইদিকে নজর দিলে দ্বিতীয় সংকটটি আমাদের ঘনীভূত হবে না।
এদিকে ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা দেখছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেছেন, আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। আমরা সবাই সম্বিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি, তবে এখন জনগণকেও আমাদের কাজে সাহায্য করতে হবে। বাসার বাইরে যেগুলো থাকবে সেগুলো আমরা করলেও বাসার ভিতরে যা থাকবে তা নিজেদেরকে পরিষ্কার করতে হবে। তবে মশার উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে।
বছরের শুরু থেকেই মশার উপদ্রবে অস্থীর হয়ে উঠেছে নগরবাসী। অন্যান্য যেকোন বছরের তুলনায় মশার উপদ্রব বেড়েছে কয়েকগুণ। এই অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আগেই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস