শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের জন্য বড় ধরনের একটা ঝুঁকি -জি এম কাদের

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের জন্য বড় ধরনের একটা ঝুঁকি -জি এম কাদের

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটা ঝুঁকি। আমাদের জন্য বিপদজনক একটা প্লান। বিপদজনক জিনিস আপনাদের জানানো দরকার। আমি মনে করি সকলকে জানিয়ে দেওয়া এটা আমার জন্য কর্তব্য। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

তিনি বলেন, রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্র এটা আগে করা হয়েছিল ১১ বিলিয়ন ডলার স্টিমিট করা হয়েছে। ১ বিলিয়ন মানে ১০০ টাকা ডলার হলে ১০ হাজার কোটি টাকা। ১ লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকা। এটার ক্যাপাসিটি হলো ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। কিন্তু ভারতে ২ হাজার মেগাওয়াট করতে খরচ ৫ বিলিয়ন ডলার। তার থেকে দ্বিগুন গুণ টাকা দিয়ে আমরা রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি। এই নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যদি দুর্ঘটনা হয় এটা হবে ভয়ংকর এক্সিডেন্ট। রাশিয়া নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বসতি স্থাপন করতে দেওয়া হয়নি।

জিএম কাদের বলেন, পদ্মা সেতু হয়েছে যদিও বলা হয় এটা আমাদের নিজস্ব বাজেটে। পরিচালন ব্যায় করতে আমাদের ট্যাক্সের টাকা শেষ হয়। আমরা উন্নয়ন বাজেট করি সম্পূর্ণ ধার করে। ব্যাংকের টাকা ধার করে বিদেশ থেকে ধার করি। বিদেশের ধারের সুদ প্রায় অর্ধেকের মত। এর মধ্যে অনেক সুদের হার দিতে হয়। বেশি সুদে পয়সা নিয়েছি তিন গুন দাম খরচ করেছি পদ্মা সেতুতে। বলা হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে অথচ জনগণের অর্থ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে আমাদের অর্থ জনগন ট্যাক্সের টাকা দেয় সেই টাকা টাকা দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা আমাদের শোধ করতে হয়। টাকার মানে কি? নিজস্ব বলে কোন টাকা নেই। আপনি একটা ফ্যাক্টারি করেন মিল করেন বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি করেন তখন তো ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে না নিয়ে বর্তমান সরকার বলেছিল এখানে দৃষ্টি রাখা হবে কোন রকম দুর্নীতি না হয়। সেখানে আমরা দুর্নীতির অভিযোগ পাচ্ছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যতটুকু টাকা ততটুকু কিন্তু তিন গুণ খরচ করেছি।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় শহরের ৬৯ ভাগ মানুষ খাবার কেনা কমিয়েছেন: বিশ্বব্যাংক

তিনি আরও বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষ, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এটা দেখার জন্য আমাদের কেউ ছিল না। দেশের নের্তৃত্বে যারা থাকতেন তাদের মধ্যেও উত্তরবঙ্গের মানুষ কোনো বড় জায়গায় খুব একটা যেতে পারে নাই। সেখানে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রথম এসেছিলেন। তখন অনেক মানুষ আশা করেছিল এরশাদ সাহেব আমাদের ছেলে আমাদের সন্তান। তারা আমাদের দিকে দেখবে। আমাদের সকল সমস্যা তিনি সমাধান করবে। এই আশা ভরসা যেমন মানুষ করেছিলেন সেই আশা ভরসা পূরণে করেতে উনি চেষ্টা করেছিলেন। আপনারা হয়তো সকলে দেখেছেন উনি এসে সারাদেশের উন্নয়ন করেছেন ও উত্তরবঙ্গের যতটা উন্নয়নে হাত দিয়েছেন। উনি চিহ্নিত করেছিলেন আমাদের মানুষ কেন অবহেলিত। কেন উত্তরবঙ্গের মানুষ পিছিয়ে থাকে। দেখা গেল যে আমাদের এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি যখন ছোট ছিলাম আমাদের এখানে বৃহত্তর কুমিল্লা বৃহত্তর ফেনীসহ অন্যান্য জেলা থেকে মানুষ আসতো এখানে কাজ করার জন্য। আমাদের এখান অনেক ছোট ছোট কাজ করতো। আগে এখানকার মানুষ নিজেই সমৃদ্ধ ছিল চাকরি করতে বাহিরে যেত না। কিন্তু মানুষের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন দেখা গেল কৃষি কাজের নির্ভর করে মানুষ আর স্বাবলম্বী হতে পারল না। একেক পরিবারে এক থেকে জন দশ জন থেকে ১০০ জন সদস্য হলো তখন তারা ক্ষুদ্র জমির মালিক হয়ে গেল। তারা গরিব হয়ে গেল।

তিনি আরও বলেন, আমাদের তখন দরকার ছিল চাকরির, দরকার ছিল ব্যবসার। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ আসেনি কেনো এরশাদ সাহেব সেটা বের করার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর এরশাদ সাহেব যারা উত্তরবঙ্গের মানুষ তাদের সরকারের নীতি নির্ধারক পদে পোস্টিং দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। উনি অনেকের জন্য কিছু করেছেন। কক্সবাজার চট্টগ্রামের জন্যও করেছেন। উনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য করেছেন। এরশাদ সাহেব যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎসহ নানা উন্নয়নের কাজ করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পর উনি যমুনা সেতুর বন্দোবস্ত করেছিলেন, পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়েছিল। ফলে এখানকার মানুষের মধ্যে আসার সঞ্চার হয়েছিল। এ কারণে আমাদের সম্পদ আমাদের উৎপাদিত কৃষি অন্য সারাদেশে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তরি তরকারির দাম বেড়েছে। কিছুর ভালো দাম পাওয়া গেছে। আপনাদের সন্তান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন আপনাদের জন্য কাজ করে গেছেন। এরশাদ সাহেব যখন জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করলেন তখন উত্তরবঙ্গের মানুষ বলতেন এটা আমাদের দল। সারাদেশে জাতীয় পার্টি আছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষ এখনো মনে করে জাতীয় পার্টি আমাদের দল। যে দল আমাদের জন্য কাজ করেছে।

আরও পড়ুনঃ  কঁচায় নদী নেই শুধুই চর!

তিনি আরো বলেন, সরকার ও রাষ্ট্রকে এক করে সরকারী দল শুধু গণতন্ত্রকে ধ্বংস নয়, এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে বর্তমান সরকার। এই সরকার সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারী সরকার।
এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে সামনের দিনে আমাদের নতুন প্রজন্মকে ধ্বংস করবে। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসহ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। দুর্নীতিতে দেশ ভেসে গেছে তারপরেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই। তাই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চাই। রুখে দাড়াতে চাই।

এ সময় জাতীয় পাটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুবিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর মাসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লেপটন, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, জেলা জাতীয় পাটির সদস্য সচিব সাজ্জাদ পারভেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক ও রশিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন