প্রতিনিধি নওগাঁর আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় একের পর এক ভেঙ্গে যাচ্ছে পাকা সড়ক।গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে আত্রাই উপজেলার অন্তত: আরো তিনটি স্থানে পাকা সড়ক ভেঙ্গে গেছে। এতে আত্রাই উপজেলা সদরের সাথে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। এছাড়া মাঠের পাকা আউশ এবং রোপনকৃত আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পরেছে প্রায় আরো আট হাজার পরিবার। পানির তোরে বিদ্যুতের পোল ভেঙ্গে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি এলাকা গত দুইদিন ধরে বিদ্যুতহীন হয়ে পরেছে। ফলে চরম দূর্ভোগে পরেছে বন্যা দূর্গত এলাকার জনসাধারণ।
আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ী বলরামচক চৌধুরীপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান,আত্রাই নদীতে গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবার রাতে আরো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কাশিয়াবাড়ী-সমস পাড়া পাকা সড়কের বলরামচক শ্মশান ঘাট এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পাকা সড়ক ভেঙ্গে যায়। এতে সোনাইডাঙ্গা,বাঁকা,কাশিয়াবাড়ীসহ কয়েকটি মাঠের পাকা আউশ ধান এবং রোপনকৃত আমন ধান পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে।
জগদাস গ্রামের জুয়েল হোসেন বলেন,বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ৯টা নাগাদ আত্রাই-সিংড়া পাকা সড়কের জগদাস বটতলি এবং এর সামান্য অদুরে শিকারপুর নামকস্থানে পানির চাপে এই দুই জায়গায় পাকা সড়ক ভেঙ্গে যায়। এতে আত্রাই উপজেলা সদরের সাথে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে।সড়ক ভেঙ্গে রাত থেকে ওই এলাকার জগদাস,খনজোর বাঁকিওলমা,থওলমা,বিপ্রোবোয়ালিয়া ও জয়সাড়াসহ কয়েকটি মাঠের পাকা আউশ এবং রোপনকৃত আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন,তার প্রায় সাত বিঘা জমির পাকা ধান পানিতে তলে গেছে। এছাড়া পুকুর ডুবে পুকুর থেকে মাছ ভেসে গেছে। তিনি বলছেন,গত বুধবার সকাল ১০টা থেকে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ’ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পরেছে কয়েক হাজার পরিবার। ফলে চরম দূরোবস্থার মধ্যে পরেছেন তারা।
আত্রাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দীন আহম্মেদ বলেন,নতুন করে পাকা সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন বরে আরো আট হাজারসহ গত দুই দিনে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে। কৃষি কর্মকর্তা পলাশচন্দ্র বলেন,বন্যায় দুপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশত হেক্টর জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পাকা ধানও রয়েছে। আত্রাই উপজেলা পল্লীবিদ্যু’ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আব্দুল আলিম বলেন,বন্যার পানির তোরে বান্দাইখাড়া,কাশিয়াবাড়ী,পাঁচুপুর,জগদাসসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ফলে বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যু’সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পানির কিছুটা চাপ কমলেই ভাঙ্গা খুঁটি পরিবর্তন করে দ্রæতই বিদ্যু’ পরিস্থিীতি স্বাভাবিক করা হবে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন,বন্যা দূর্গতদের সহায়তা করতে ইতি মধ্যে ১৬ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
আত্রাই-রাণীনগর সংসদীয় আসনের এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা,উপজেলা প্রশাসন,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেচ্ছা সেবকদের নিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া অংশগুলো মেরামত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যাদূর্গতদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এর আগেবুধবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আত্রাই নদীর নন্দনালী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং আত্রাই-বান্দাইখাড়া পাকা সড়কের নন্দনালী সরদারপাড়া তালতলা এলাকায় পাকা সড়ক পানির তোরে ভেঙ্গে যায়। এতে অন্তত: এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরে। এছাড়া বুধবার গভীর রাতে রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ী হাফেজিয়া মাদ্রাসা এলাকায় নদীর বেড়িবাঁধ এবং এর আধা কিলোমিটার দুরেই দক্ষিন নান্দাই বাড়ীর বেরিবাধ ভেঙ্গে যায়। এছাড়া বুধবার বিকেলে আত্রাই-নওগাঁ সড়কের নান্দাইবাড়ী নামকস্থানে পাকা সড়ক ভেঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে প্রায় পাঁচ শতাধীক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরে।