সবজির বাজারে কয়েকদিন ধরেই বইছে এক ধরনের শীতল বাতাস। সবজিতে বাজার ভরপুর হওয়ায় সব ধরনের সবজিতে দামের ভাঁটা পড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা সবজির বাজারে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলেও ডাল-তেল ও মসলার বাজারে হচ্ছে নাভিশ্বাস। কিছুদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী তেল-ডাল ও মসলার দাম।
আজ শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাকসবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই কম। তবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল, মসুর ও মুগ ডাল। আর মসলার মধ্যে এলাচির দাম একটু বেড়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে যে দেশি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তার কিছুটা ঝাঁঝ কমে আজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা এবং চায়নার পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে আদা ও রসুনের বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।
মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারে আসা আকলিমা জান্নাত নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। দেখেন না দুই সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ কিনেছি ১২০ টাকা কেজি তা পরে সপ্তাহেই হয়ে গেছে ১৮০ টাকা কেজি আর আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০টাকা কেজি। এ যেন চোর-পুলিশ খেলা চলছে।
শেওড়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম কখন বাড়ে, আর কখন কমে বলা মুশকিল। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ১৮০ টাকা হওয়ায় একটু বেশি করে পেঁয়াজ কিনে রেখেছিকাম। কিন্তু এখন দাম কমে গেছে। ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজি পেঁয়াজে লোকসান গুণতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা ।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রায় সবরকম শীতের সবজি। তবে কাঁচা পেঁপের দাম বেড়েছে কিছুটা। মানভেদে পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিজনে পেঁপের উৎপাদন বেশি থাকায় বাজারে সরবরাহ থাকে ভরপুর। ফলে চাহিদা থাকার পরও দাম কম থাকে।কিছুদিন আগে পেঁপের সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। যে কারণে দাম কিছুটা বাড়তি।
এদিকে, বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা কমে গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতি কেজি শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকা, নতুন আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আকারভেদে প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে।
তবে লাউ এর দামে এখনও ভাঁটা পড়েনি। আকারভেদে প্রতি পিস শীত লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি আঁটি লালশাক ৮ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, পালংশাক ৮ থেকে ১০ টাকা, লাউশাক ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কল্যাণপুরের ব্যবসায়ী আলাল আলী বলেন, বাজারে সব ধরনের শীতের সবজির সরবারহ ভালো। যে কারণে দাম কমেছে। সামনে দাম আরও কমতে পারে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম দুই-এক দিনের মধ্যে আরও কমবে। তবে তখন কপির স্বাদ অনেকটাই কমে যাবে।
একই বাজারের ক্রেতা মোক্তার হোসেন বলেন, আমার মতে সবজির দাম এখনো কিছুটা বেশি। যে পেঁপের কেজি ১৫ টাকা ছিল এখন তা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এতো ফুলকপি তার পরেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বছরের প্রায় পুরোটা সময় দাম দিয়ে সবজি কিনে থাকি। শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম যাচ্ছে এখন দাম না কমলে কখন কমবে।
এদিকে ভোজ্য তেলের দাম বেশ কয়েক দিন ধরেই বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পাম তেলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখন প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এদিকে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। মানভেদে এই তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা লিটার। যেগুলো এর আগে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছিল।
গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে বেড়েছে প্রায় সব রকম ডালের দাম। মোটা মসুর ডাল ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়ে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই মসুরের ডাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি। এছাড়া দাম বেড়ে প্রতি কেজি মুগের ডাল বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
এইদিকে বেশ কয়েকদিন থেকেই দাম বাড়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে এলাচ। কয়েক মাসের ব্যবধানে এলাচের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা। যে এলাচ কয়েকমাস আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকায় এখন সেই এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছে জিরার দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকায়।
মোহাম্মদপুর বাজারের মুদির দোকানদার ফজর আলী বলেন, মুকামে সব কিছুর দাম বেশি। তেল-মসলার দাম বাড়তি। মুকামে দাম বেশি থাকলে আমাদের কি করার আছে?
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা দাম কমেছে মাছের। প্রতি কেজি মলা ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকা, ছোট পুঁটি (তাজা) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বাগদা ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৩৬০ থেকে ৫২০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ৩৩০ টাকা, পাঙ্গাস ১১০ থেকে ১৯০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, কৈ ১৭০ থেকে ২১০ টাকা, কাতল ২৪০ থেকে ২৯০ টাকায় বাজার ভেদে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর বাজারে বাজার করতে আসা মীম নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজার এখন পাগলা ঘোড়া। সব কিছুরি দামই বাড়তি। আমাদের সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩৫ টাকায়। এছাড়া পাকিস্তানি কর্ক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, আর দেশি মুরগি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গরুর মাংস ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ডজন এবং দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি।