শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা থেকে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা পৌঁছাল ট্রেন

ঢাকা থেকে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা পৌঁছাল ট্রেন

ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছেছে প্রথম ট্রেন। ঢাকা থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ পাড়ি দিতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে পরীক্ষামূলক ট্রেনটির।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। ট্রেনটি কেরানীগঞ্জ এলিভেটেড রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে, নিমতলা স্টেশনে বেলা ১১টা ১ মিনিটে, শ্রীনগর স্টেশনে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে, মাওয়া স্টেশনে বেলা ১১টা ২৪ মিনিটে পৌঁছায়। সেখান থেকে বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে পদ্মা সেতুতে উঠে, ৭ মিনিট পর বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে ট্রেনটি সেতু থেকে নামে। এরপর ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায় দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে।

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরীক্ষামূলক যাত্রার প্রথম এই ট্রেনটি চালিয়েছেন লোকোমাস্টার হিসেবে এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে এম এ হোসেন। আর গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করেছেন আনোয়ার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী তারিখ দিয়েছেন বলে জানান নূরুল ইসলাম সুজন। এই রেললাইন উদ্বোধনের ফলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রা সহজ হবে।

আরও পড়ুনঃ  প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জীবন বদল ইসরাতের

উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা অংশে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৮৮.৫ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া অংশে কাজের অগ্রগতি ৮০.৫০ শতাংশ। এই অগ্রগতির মধ্যে ২৬.৪০ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্টের কাজ ১০০ শতাংশ, ৩০.০২ কিলোমিটার প্রিপেয়ার্ড সাবগ্রেডের কাজ ৯৬.৯৩ শতাংশ, ৩০.০২ কিলোমিটার সাব ব্যালাস্টের কাজ ৯৬.৩৮ শতাংশ, ১৫টি মেজর ব্রিজের কাজ ৮৬.৬৭ শতাংশ, ৩৫টি কালভার্ট/আন্ডারপাসের কাজ ৯৪.২৯ শতাংশ, ৩ হাজার ৮১৭টি ওয়ার্কিং পাইলের কাজ ১০০ শতাংশ, ৬ হাজার ১২১টি প্রিকাস্ট বক্সগার্ডার সেগমেন্টের (কেরানীগঞ্জ স্টেশনসহ) কাজ ১০০ শতাংশ, ৫৩০টি ভায়াডাক্ট-১ এর পিয়ার ও অ্যাব্যাটমেন্টের (কেরানীগঞ্জ স্টেশনসহ) কাজ ১০০ শতাংশ, ২০.৪৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট-১ এর ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্লাবের কাজ ৯৪.০৪ শতাংশ, ৫২৬টি ভায়াডাক্ট-১ এর স্প্যান স্থাপনের (কেরানীগঞ্জ স্টেশনসহ) কাজ ১০০ শতাংশ, ২০.৪৬ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট-১ এর ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্লাবের কাজ ৯৪.০৪ শতাংশ, ৪টি স্টেশন ভবন নতুন নির্মাণ ও বিদ্যমান স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণের কাজ ৪৮ শতাংশ, নতুন স্টেশনে সিগনালিং ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কাজ ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

এছাড়াও, মাওয়া-ভাঙ্গা অগ্রাধিকার অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৬.৫০ শতাংশ। এই অংশে এমব্যাংকমেন্ট ২৬.৩৫ কিলোমিটার, প্রিপেয়ার্ড সাবগ্রেড ২৪.৫৫ কিলোমিটার, সাব ব্যালাস্ট ২৭.১৫ কিলোমিটার, মেজর ব্রিজ ১৩টি, কালভার্ট/আন্ডারপাস ৬৯টি, ওয়ার্কিং পাইল এক হাজার ৭১৩টি, প্রিকাস্ট বক্সগার্ডার সেগমেন্ট ২ হাজার ৫৮টি, ভায়াডাক্ট-২ এর পিয়ার ও অ্যাব্যাটমেন্ট ৬৮টি, ভায়াডাক্ট-২ এর ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্লাব ২.৫৮ কিলোমিটার, ভায়াডাক্ট-২ এর স্প্যান স্থাপন ৬৭টি, ভায়াডাক্ট-৩ এর পিয়ার ও অ্যাব্যাটমেন্ট ১০৮টি, ভায়াডাক্ট-৩ এর ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্লাব ৪.০৩ কিলোমিটার, ভায়াডাক্ট-২ এর স্প্যান স্থাপন ১০৭টি, পদ্মা সেতু ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্লাব ৬.৬৮ কিলোমিটারের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৪৩.৯২ কিলোমিটার ব্যালাস্টেড ট্র্যাকের কাজ শেষ হয়েছে ৯২.৭৩ শতাংশ, ৪টি স্টেশন ভবন নতুন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ এবং স্টেশনগুলোতে সিগনালিং ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে ৬২ শতাংশ।

আরও পড়ুনঃ  কমলগঞ্জে রেল লাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ হয়েছে ভাঙ্গা-যশোর অংশে। এর মধ্যে ৮৩.১৬ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্টের কাজ ৯৮.৯৮ শতাংশ, ৮৩.১৬ কিলোমিটার প্রিপেয়ার্ড সাবগ্রেডের কাজ ৮৮.২৭ শতাংশ, ৮৩.১৬ কিলোমিটার সাব ব্যালাস্টের কাজ ৭৪.০৯ শতাংশ, ৩২টি মেজর ব্রিজের কাজ ৯৬.৮৮ শতাংশ, ১৬৮টি কালভার্ট/আন্ডারপাসের কাজ ১০০ শতাংশ, ১ হাজার ২৬৮টি ওয়ার্কিং পাইলের কাজ ১০০ শতাংশ, ৯টি স্টেশন ভবন নতুন নির্মাণ ও বিদ্যমান স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণের কাজ ৩৭ শতাংশ, ১১০.৭৩ কিলোমিটার ব্যালাস্টেড ট্র্যাকের কাজ ১৩.৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে।

৮২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে ঢাকা-যশোর অংশে কাজ। এর মধ্যে ১৩৫.৯২ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্টের কাজ ৯৯.৩৮ শতাংশ, ১৩৭.৭৪ কিলোমিটার প্রিপেয়ার্ড সাবগ্রেডের কাজ ৯২.২৫ শতাংশ, ১৪০.৩৪ কিলোমিটার সাব ব্যালাস্টের কাজ ৮৩.৮৭ শতাংশ, ৬০টি মেজর ব্রিজের কাজ ৯৫ শতাংশ, ২৭২টি কালভার্ট/আন্ডারপাসের কাজ ৯৯.২৬ শতাংশ, ৬ হাজার ৭৯৪টি ওয়ার্কিং পাইলের কাজ ১০০ শতাংশ, ৮ হাজার ১৭৯টি প্রিকাস্ট বক্সগার্ডার সেগমেন্টের (কেরানীগঞ্জ স্টেশনসহ) কাজ ১০০ শতাংশ, ৭০৬টি ভায়াডাক্ট পিয়ারের কাজ ১০০ শতাংশ, ৭০০টি ভায়াডাক্টের স্প্যান স্থাপনের কাজ ১০০ শতাংশ, ৩৩.৭৭ কিলোমিটার ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্লাবের কাজ ৯৬.৩৯ শতাংশ, ১৯৩.১৮ কিলোমিটার ব্যালাস্টলেস ট্র্যাকের কাজ ৪৪.৩৫ শতাংশ, ১৭টি স্টেশন ভবন নতুন নির্মাণ ও বিদ্যমান স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণের কাজ ৬৩ শতাংশ, নতুন স্টেশনগুলোর সিগনালিং ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কাজ ৪৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্পের অধীনে ১০০টি ব্রডগেজ কোচ সংগ্রহের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন