শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাঁস মুরগি পালনে হাসির ঝিলিক

হাঁস মুরগি পালনে হাসির ঝিলিক

প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা চাই ব্যক্তিগত ভাবে তারা কিছু না কিছু করে উপার্জন করতে। সেই আয় থেকে নানা ভাবে সংসারে যোগান দিতে। বর্তমানে স্বল্প আয়ের লোকদের চলা কঠিন হয়ে পড়ায় সেই কঠিনকে জয় করতে নানা প্রকার আয়মূলক কাজ করার চেষ্টা করছেন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অসহায় হতদরিদ্র লোকজনরা অনেকেই বাড়িতে হাঁস মুরগি, কবুতর পালনসহ আয়মূলক নানা কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। নিজেদের প্রচেষ্টায় আয় মূলক কাজ করার ফলে দুর হয়েছে তাদের দু:খ কষ্ট। মুখে ফুটে উঠেছে তাদের হাঁসির ঝিলিক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক স্বল্প আয় পরিবারের লোকজনরা সংসারে বাড়তি আয় করতে হাঁস,মুরগি,কবুতরসহ নানা প্রকার পাখি পালনের দিকে ঝুঁকছেন। গ্রামাঞ্চলের এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে হাঁস,মুরগি কবুতর নেই। স্বল্প পুঁজিতে হাঁস, মুরগি, কবুতর পালনে বাড়তি আয় করছেন। তবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ওইসব পালন। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও ওইসব পালন করে নিজ খরচের পাশাপাশি সংসারে কিছু সহযোগিতা করতে পেরে তারা খুবই খুশি।

পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার গৃহিণী আকলিমা আক্তার বলেন, তার এক ছেলে দুই মেয়েসহ পরিবারে ৫ জন সদস্য রয়েছে। তার স্বামী দৈনিক মজুরি কাজ করছেন। যে টাকা মজুরি পান তাতে সংসার চলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই পরিবারে কিছু বাড়তি আয় করতে বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করছেন। বর্তমানে তার ২০ টি মুরগ ও ১৫টি হাঁস ও বেশ কয়েকটি রাজা হাঁস রয়েছে। ডিম বিক্রি করে প্রতিমাসে তিনি ৪ হাজার টাকার উপর আয় করছেন। ওই টাকা দিয়ে এখন তার হাত খরচের পাশাপাশি ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচের যোগান দিচ্ছেন। হাঁস মুরগি পালনে তেমন কোন পরিশ্রম নেই। সারা বছরই পালন করা যায়।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮২ ভাগ পোশাকশ্রমিক

মো: মহিউদ্দিন বলেন, এক সময় তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। এক পর্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসার চলা কঠিন হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে রাজাহাঁস, দেশীয় হাঁস, ও মুরগি পালন করছেন। তিনি বলেন এক একটি রাজা হাঁস স্থানীয় বাজারে নিচে ২২শ থেকে ২৫শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিমাসে ১ জোড়া হাঁস বিক্রি করা যায়। তাছাড়া দেশিয় হাঁস ও মুরগির ডিম চাহিদা থাকায় বাড়িইে বিক্রি করা যায়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে প্রতি মাসে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান।

উপজেলার দরুইন গ্রামের গৃহিণী মৌসুমী আক্তার বলেন, তার স্বামী একজন অটো রিকশা চালক। পরিবারে দুই মেয়ে দুই ছেলে রয়েছে। বাড়িতে তাদের মাথা গুজার ঠাঁই ছাড়া আর কোন জায়গা নেই। স্বামীর রোজগারের আয়ে চলে তার সংসার চলছে। সংসারে নিজে কিছু উপার্জন করতে জমানো স্বল্প টাকা দিয়ে ৫টি হাঁস ও ৭টি মুরগি ক্রয় করে লালন পালন করেন। বর্তমানে তার ১৬টি হাঁস, ১০টি রাজহাঁস ও ১৭ টি মুরগ রয়েছে। ডিম বিক্রি করে মাসে তার ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা তার আয় হচ্ছে। এখন নিজের ও সন্তানের খরচ নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। বরং সংসারের অনেক খরচে তিনি সহযোগিতা করছেন।
আজমপুর এলাকার মো: বাছির মিয়া জানায়, তিনি একজন কৃষক। বছরজুরে নানা প্রকার সবজি চাষ করছেন। ওইসবের আয় দিয়ে চলছে তার সংসার। গত ৩ বছর ধরে তার স্ত্রী ও ছেলে হাঁস, মুরগি আর কবুতর লালন পালন করছেন। বর্তমানে ১৫ টি হাঁস , ১৬ টি মুরগ ও ১৫টি রাজা হাঁস রয়েছে। পাশাপাশি আরো ৩০ জোড়া কবুতর রয়েছে। তিনি বলেন স্থানীয় পর্যায়ে দেশি হাঁস ও মরগির ডিমের ভালো কদর রয়েছে। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার উপর আয় করছেন।

আরও পড়ুনঃ  বিষমুক্ত সবজি চাষে বিপ্লব

গৃহিণী খোদেজা বেগম বলেন, তার স্বামী একজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে রয়েছে। শখের বসে তার ছেলে বাড়িতে কবুতর, আর হাঁস পালন করছেন। সেই সাথে তিনি ও মুরগি পালন করছেন। এসব পালনে তেমন খরচ নেই। তাছাড়া রোগ বালাই কম। গত মাসে ৮ হাজার টাকার কবুতর,হাঁস মুরগি বিক্রি করেন।

মো: সুমন মিয়া বলেন, তার পরিবারে স্ত্রী ১ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। ছেলে ৮ম শ্রেণি আর মেয়ে ৫শ শ্রেণিতে পড়ছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সামান্য আয়ের সংসার হওয়ায় চলা তাদের খুবই কষ্টকর হয়ে উঠছে। একপর্যায়ে তার স্ত্রী বাড়তি আয় করতে হাঁস ও মুরগ পালন করে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকার উপর আয় করছেন। এই টাকা দিয়ে নিজ ও ছেলে মেয়ের খরচ চালাচ্ছেন।

লিমন মিয়া বলেন ছোট বেলা থেকেই কবুতর পালনে তার খুব শখ ছিল। গত ২ বছর আগে ১ জোড়া কবুতর দিয়ে এখন ৩০ জোড় হয়েছে। প্রতিমাসে অন্তত দেড় হাজার টাকার উপর তিনি কবুতর বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন, অবসর সময় বসে না কাটিয়ে আয় মূলক কিছু করলে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা যায়।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জুয়েল মজুমদার বলেন, উপজেলার অনেক নারী পুরুষ হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ নানা জাতের পাখি পালনে বেশ আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা ওইসব পালন করে অনেকেই অভাব অনটন গুছাতে কাজ করছেন। ওইসব পালনে যখনই কোন সমস্যা হচ্ছে আমাদের কাছে আসলে সেবাসহ পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানায়।

আরও পড়ুনঃ  কর্মঘণ্টা গ্রাস করছে রেলক্রসিং

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন