তুরস্ক ও সিরিয়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার এদিকে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৭১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, তুরস্কে এখন পর্যযন্ত ৩১ হাজার ৬৪৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেশিটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানায়, এবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তুরস্কের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরও তুরস্কের ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচ থেকে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন খাবার-পানি ও বাতাস ছাড়া আটকে থাকায় কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা একেবারেই কমে গেছে বলে দাবি উদ্ধারকারীদের। ভূমিকম্প আঘাত হানার ১৮২ ঘণ্টা পর সোমবার (১৩ জানুয়ারি) তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হাতাইয়ে ধসে পড়া এক ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। একই দিনে আদিয়ামান শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে মিরায় নামের ছয় বছর বয়সী এক বালিকাকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকাজে ধীরগতিসহ এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন বেঁচে যাওয়া মানুষেরা। ক্রমেরই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার মাত্রা বাড়ছে। পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবের পাশাপাশি, প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া উদ্ধার অভিযানের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের উদ্ধার অভিযানের পরিসর গুটিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পোল্যান্ডের কয়েকজন উদ্ধারকারী জানান, বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) তারা তুরস্ক ছেড়ে যাবেন। এর আগে জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ জানিয়েছিলেন, উদ্ধার অভিযান প্রায় শেষের দিকে। এখন আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার দিকে মন দিতে হচ্ছে। গত সোমবার রাতে কূটনীতিকরা জানান, তুরস্ক থেকে জাতিসংঘের ত্রাণ সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
এদিকে আল-জাজিরার বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, এবার ইস্তাম্বুলকে শক্তিশালী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বৃহত্তম নগরী ইস্তাম্বুল, প্রধান সমুদ্রবন্দর, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক কেন্দ্র এটি। যা যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে এবারের ভূমিকম্প। আল-জাজিরার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, তুরস্কের এই নগরী ভূমিকম্পের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর ইস্তাম্বুলে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তুরস্কের এই ব্যবসা ও পর্যটনকেন্দ্রিক রাজধানীতে অন্তত ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের আসন্ন হুমকির মধ্যে রয়েছে এই শহর। ইস্তাম্বুলের ইলদিজ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুকরু ইরসয় আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ভূতাত্ত্বিক যে তথ্য আছে তা বিশ্লেষণ করে বলা যায়, যেকোনো সময় ইস্তাম্বুলে ভূমিকম্প হতে পারে। অতীতের ভূমিকম্পের ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, মারমারা সাগরের নিচে, কাছাকাছি একটি ফল্ট লাইন রয়েছে। আমরা গবেষণার মাধ্যমে জানি, উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন প্রতি বছর কতটা নড়াচড়া করে। ফল্ট লাইনের গতিবিধি ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, তবে এটি কখন ঘটবে তা সঠিকভাবে জানা অসম্ভব।’
তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের উদ্ধার পর্ব শেষ হতে চলেছে: তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও ‘অলৌকিকভাবে’ বেঁচে ফেরার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পের কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজের সমাপ্তির ঘণ্টাধ্বনি বাজছে। সোমবার তুরস্কের হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৩ বছরের এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে। টানা ১৮২ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিল ওই বালক, এমন তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। জাতিসংঘের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে উদ্ধার পর্ব ‘শেষ হয়ে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, এখন দুর্যোগকবলিত লোকজনের জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। সোমবার দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সূত্রের বরাত দিয়ে আনাদোলু নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, শুধু তুরস্কেই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৬৪৩ জন।
প্রসঙ্গত, ৬ ফেব্রুয়ারির তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সৃষ্ট ৭ দশমিক ৮ ও ৭ দশমিক ৬ মাত্রার দুটি ভূমিকম্প চলতি শতাব্দীর ষষ্ঠ প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে উঠছে। এর আগে আছে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে হওয়া ভূমিকম্পে প্রায় ৭৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
আনন্দবাজার/কআ