শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষিজমিতে অবৈধ ইটভাটা

কৃষিজমিতে অবৈধ ইটভাটা

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপটে কৃষিজমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ছয়টি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানো লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট এমনকি ভ্যাট-আয়কর প্রদানের কাগজপত্র ছাড়াই ইটভাটার মালিকরা আবাদী জমি ও জনবসতী এলাকাসহ স্কুল-কলেজের পাশে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ইট পোড়ানো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ সব ইটভাটার কারণে জনবসতি, ফসলি জমিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা গড়ে উঠায় বিষাক্ত ছাঁই, কালো ধোঁয়ায় ফলন হ্রাসের আশংকায় পড়েছে কৃষকদের শতশত একর আমন ও বোরো আবাদ, রবিশস্য, সুপারি, নারিকেল, আম-জামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল। সেই সঙ্গে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ শতশত পরিবার।  পাশাপাশি ইট তৈরি কাঁচামালের জন্য আবাদি জমির উপরের মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের আজোয়াটারী গ্রামের বিস্তৃর্ন কৃষিজমিতে মেসার্স ডব্ল্উি এ এইস ব্রিকস্ ফিল্ড, এ বি ব্রিকস্, মেসার্স এম এস এইচ ব্রিকস্, বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ এলাকায় সাইফুর রহমান সরকারী কলেজের পাশে মেসার্স এএমবি, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের খামারের বাজার এলাকায় মেসার্স কেএমবি এবং শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জকুরটল এলাকায় মেসার্স জেএমএস ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এ সকল ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নাই। পরিবেশ অধিদপ্তরে নামমাত্র আবেদন করে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইটভাটার আয়তন দুই একরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও বিস্তৃত এলাকা দখলে নিয়েছে তারা। ভরাট করেছে পানি নিষ্কাষনের পথ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারী নিময়নীতির তোয়াক্কা করছে না।

আরও পড়ুনঃ  অবৈধ স্ট্যান্ড-ফুটপাত দখল

স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম (৩৮), হজরত আলী (৬২) ও খলিল উদ্দিন (৪৫) জানান, ভাটার মালিকরা জমি ভাড়া নিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করছে। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় গত ৫ বছর ধরে বোরো এবং আমন আবাদের ফলন বিঘা প্রতি ৬/৭ মন কমে এসেছে। ভাটার কালো ধোয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সুপারী বাগানের। ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় কয়েক বছর থেকে এই এলাকায় সুপারীর ফলন কমে এসেছে। তাছাড়া আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের ফলনও কমে গেছে। ভাটার মালিকরা ইট পরিবহনের জন্য উঁচু রাস্তা তৈরী ও সেতুর মুখ বন্ধ করায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর এই এলাকার শতশত বিঘা আমন খেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মেসার্স ডব্লিউ এ এইচ ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক মোশারফ হোসেন জানান, শুধু আমার ভাটার না জেলার কোনো ইট ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র নাই। প্রতি বছর মালিক সমিতির লোকজনসহ ডিসি অফিসে কথা বলেছি। তারা ভাটা চালনোর মৌখিক অনুমতি দেওয়ায় ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ইতিমধ্যেই গত ৮ ডিসেম্বর তিনটি ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। ওই তিন ভাটার কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই তাদেরকে আগামী ২২/১২/২০২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে কাগজ দেখাতে না পারলে অবৈধ ইট ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাকি তিন ইট ভাটায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন