শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হলদেমাঠে পর্যটনের হাতছানি

হলদেমাঠে পর্যটনের হাতছানি

সরিষা ফুলের সমারোহে নয়নাভিরাম এখন চলনবিল। নাটোরের গুরুদাসপুরসহ চলনবিলাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। দুচোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর সবুজের সমারোহ। যেন এক টুকরো মিনি বাংলাদেশ। গাঢ় সবুজের বুকে হলুদের ছিটা। সোনার ফসল ঘরে তুলতে আশায় বুক বেঁধে আছেন চলনবিলের কৃষক।

চলনবিলের বিভিন্ন মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলনবিলের মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। যে দিকে তাকানো যায় চারদিকে শুধুই হলুদের সমারোহ। দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতির এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে যে কোনো মানুষই মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। হলুদ ফুলের সুসজ্জিত মাঠে ভ্রমর পাখা মেলেছে উড়ছে। ভ্রমরের গুঞ্জন ফসলের অপরূপ দৃশ্যে কৃষক, মৌয়াল আর ভ্রুমণ পিপাসুদের মনে প্রশান্তির ছায়া।
একদিকে সরিষার এই ফুল থেকে প্রতিবছর মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষীরা। অন্যদিকে ফলনও বেশি হয় পরাগায়ণের ফলে। নাটোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, এবার চলনবিলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা বপন করা হয়েছে। ফলন ভালো হলে এবং ফসলের ন্যায্য মুল্য পেলে লাভবান হবেন কৃষকরা।

শুধু তাই নয় সরিষা ফুলের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষগুলো। প্রতিদিনই বাড়ছে পর্যটকের ভিড়। বর্ষায় পানিতে ডুবে টইটুম্বুর থাকে এই চলনবিল, আর শুকনো মৌসুমে মাঠজুড়ে ফুটে থাকে সরিষা ফুল আর বোরো ধানের সবুজের সমারোহ। এই সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ছোট বড় নানা বয়সের ভ্রমণ পিপাসুরা। কাজের ফাঁকে ক্লান্তি দূর করতেই এশিয়ার এই সর্ব বৃহৎ বিলে ছুটে আসেন তারা।

আরও পড়ুনঃ  সূচকের উত্থানে চলছে লেনদেন

চলনবিলের সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা রাফি, মৌমিতা ও টুম্পা জানায়, বর্ষা মৌসুমে একবার এসেছিলাম পানির সৌন্দর্য্য দেখতে। শুকনো মৌসুমে সরিষা ফুলের হলুদে মেতে থাকা সৌন্দর্য্যরে কথা শুনেই আবার চলে আসলাম। তবে অনেক ভালো লেগেছে। সময় পেলে পুরো চলনবিলটাই ঘুড়ে দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্ত মন না চাইলেও সময়ের টানে ফিরে যেতে হচ্ছে।

গুরুদাসপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় জানান, চলনবিল বছর জুড়েই তার চিরোচেনা নানা রূপ আর সৌর্ন্দয্য দিয়ে বিভিন্ন সময় নানা ভাবে বিভিন্ন রূপে পর্যটকদের কাছে টানে। চলনবিলের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখলে চলনবিলের অপার সৌর্ন্দয্যটাই যেন অধরা থেকে যায়।

কালের বিবর্তনে এ অঞ্চলেরও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। কৃষকরা বিগত দেড় যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন আবাদের পাশাপাশি সরিষার আবাদ করেছেন। এখন নাটোরর গুরুদাসপুর, সিংড়া সিরাজগঞ্জ তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা এলাকাজুড়ে সরিষার ক্ষেতে হলুদ ফুলে একাকার হয়ে গেছে। কৃষকরা আশা করছেন, এবার বাম্পার ফলন। এ কারণে তারা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষকদের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।

সরেজমিন জানা যায়, এ বছর চলনবিলের গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ, চাটমোহর উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর ও ভাঙ্গুগুড়া উপজেলার মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। এ বছর চলনবিলাঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

গুরুদাসপুর কৃষি অফিস জানান, চলতি মৌসুমে এবার ৭শ ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সিংড়ার উপজেলা কৃষি অফিসার সেলিম রেজা জানান, এবছর সিংড়াতে ৩হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। চাটমোহরে এবছর উপজেলায় ৬হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। ভাঙ্গুরায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। শাহজাদপুরে ১৪ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে। এছাড়া চলনবিল অধ্যুসিত সকল উপজেলা মিলে প্রায় ৬০হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর সরবরাহ যাচাইয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার ধাপ-তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক বুলবুল হোসেন বলেন, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি ফলনও ভালো হবে। কিন্তু বর্তমানে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষকের জমিতে পোকায় সরিষার চারার গোড়া কেটে দিচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা গ্রামের গোলাম সরদার জানান, এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৬ থেকে সর্বচ্চ ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হলে বিঘাতে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা হয়। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ১৮ হাজার টাকা। এছাড়াও পারিবারিক চাহিদা যেমন তৈল, গরুর খৈইল, জ্বালানিও পাওয়া যায়। একারণে বোরো ধানের আগে সরিষার আবাদ করে নেই। এই টাকাতেই ধানের অর্ধেক খরচ উঠে আছে।

এব্যাপারে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এবছর কৃষকদের সরিষা চাষে ব্যাপক সচেতন করা হয়েছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমণ হলে কি করণীয় সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থেকে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধিতে নিজ পরিবারের চাহিদা ও দাম বেশি পাওয়ায় সরিষা চাষে ঝুকছেন চলনবিলের কৃষকরা।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন