শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণের টাকায় ভারসাম্য

ঋণের টাকায় ভারসাম্য
  • চার বছরে ৭ কিস্তিতে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার
  • আইএমএফের ঋণে সুদের হার ২.২ শতাংশ
  • যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবেই পাচ্ছি: অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চার বছর মেয়াদী ৭ কিস্তিতে সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বুধবার দুপুর রাজধানী ঢাকার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, আইএমএফ সেভাবেই ঋণ দিচ্ছে। ঋণ আমরা পেতে যাচ্ছি ইনশাল্লাহ। ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। সাত কিস্তিতে ২০২৬ পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঋণদানকারী সংস্থা আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। তারই অংশ হিসেবে ঋণ দেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ঋণের টাকা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, বাজেট সহায়তা ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ২ দশমিক ২ শতাংশ সুদে। অর্থাৎ সুদের হার হবে ফ্লাটিং তথা বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী মোট ঋণের ওপর সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম কিস্তি ৩৫২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া যাবে। বাকী ঋণ প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ৫১৯ মিলিয়ন এসডিআর হিসেবে ২০২৬ সালের মধ্যে পাওয়া যাবে। মোট ঋণের পরিমাণ হবে ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর। যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আরও পড়ুনঃ  আবারও বেড়েছে চাল-তেল-আলু-ময়দার দাম

তিন ধরনের ঋণের মধ্যে রয়েছে ইক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফেসিলিটি-ইসিএফ, ইক্সটেন্ডেড ফান্ড ফেসিলিটি-ইএফএফ, রেসিলেইন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফেসিলিটি-আরএসএফ। ইসিএফে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন এসডিআর। এটি সম্পূর্ণ সুদমুক্ত। ইএফএফে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৬৪৫ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন এসডিআর। এখানে সুদের হার হচ্ছে ফ্লাটিং এসডিআরআই ১ শতাংশ। আরএসএফে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ বিলিয়ন এসডিআর। এখানে সুদের হার হচ্ছে ফ্লাটিং এসডিআরআই ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সকল দেশে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সকল দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে কোনো ধরনের সংকটে ঘনীভুত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাদের সঙ্গে এর আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আইএমএফ টিম আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি।

এই ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেয়া, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া।

মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রাখা হবে, যা গত প্রায় ১৪ বছর যাবত আমরা করে আসছি। আমাদের সরকারের সবসময় প্রচেষ্টা থাকে বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। গত বছর আমাদের বাজেট ঘাটতি ছিল ৫.১ শতাংশ, যা এই অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ ধরা আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করা, যা আমরা প্রতি অর্থবছরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছি।

আরও পড়ুনঃ  আবাসনখাতে স্থবিরতা

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থবছরে আমাদের বরাদ্দ রয়েছে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ। আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন কয়েকটি আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো কয়েকটি আইনের সংশোধনের চলমান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার জোরদার এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা হবে। ভ্যাট আদায়ের জন্য আমরা ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ যাবত ৬ হাজার ৭৩২টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছরে আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে এবং পরবর্তী ৪ বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মেশিন স্থাপিত হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা, যাতে সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলে দেশের অভ্যন্তরেও তা একইভাবে কমানো যায়। টাকার বিনিময়হার নির্ধারণের কাজটি ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, যা আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা। একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়নের পরিকল্পনা করা, যার মধ্যে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টিও থাকবে ইত্যাদি।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন