পোশাক খাত ভালো করলে রপ্তানি আয় হৃষ্টপুষ্ট হয়-
মহিউদ্দিন রুবেল, পরিচালক, বিজিএমইএ
রির্জাভ বাড়াতে বেশি ভরসা করতে হয় রেমিট্যান্সে। তবে গেল অক্টোবরে আগের আট মাসের চেয়ে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। রেমিট্যান্সের পর রিজার্ভের দ্বিতীয় ভরসার জায়গা রপ্তানি আয়। আর এক্ষেত্রে প্রধানখাত তৈরি পোশাক রপ্তানি। তবে এখানেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি বেড়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের শঙ্কায় অন্যতম প্রধান দুই খাতেই দুঃসংবাদ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে রিজার্ভের শঙ্কা গিয়ে পড়েছে এখন পোশাকখাতে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধি করতে রপ্তানি আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে পোশাকখাত সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বিদ্যুতের সংকটের কারণে পোশাকখাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারাখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অনেক কারাখানায় অর্ডার ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পোশাকখাতে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শেষ অবধি যা রিজার্ভের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সূত্রমতে, সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য রপ্তানি আগের চেয়ে বেড়েছে। বিদায়ী মাসে এখাতে আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ডলার। যদিও এর আগের বছর অক্টোবরে রপ্তানি আয় ছিল ৩৫৬ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। হিসাব মতে, গেল বছরের চেয়ে চলতি বছরের অক্টোবরে পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। যা শতাংশের হিসেবে ৩ শতাংশ। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
কেননা, বিদায়ী অক্টোবরে পোশাকখাত থেকে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮ হাজার ডলার। সেখানে আয় এসেছে ৩৬৭ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রপ্তানি আয় কমেছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৭ হাজার ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পোশাক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৯৫ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অথচ বিগত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ৫ হাজার ডলার। হিসাব মতে, আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে যেভাবে প্রত্যাশা ছিল সেভাবে রপ্তানি আয় আসেনি।
ইপিবির মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪০৫ কোটি ৬১ লাখ ৪ হাজার ডলার। সেখানে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৯৫ কোটি ২৩ লাখ ৪ হাজার ডলার। অর্থাৎ ১০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার কম রপ্তানি হয়েছে। শতাংশের হিসাবে যা দশমিক ৭৪ শতাংশ।
যদিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়ে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এখাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, অক্টোবরে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বলছেন, বিশ্বব্যাপী খুচরা বাজারগুলো সংগ্রামরত। ক্রেতারা নতুন কার্যাদেশ প্রদান ও ইনভেনটরি পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ অনুসরণ করছে। আগামী মাসগুলোতে কার্যাদেশ প্রাপ্তি এবং প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী নই।
মহিউদ্দিন রুবেল দাবি করেন, একক মাসে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য। আমাদের শিল্পের আরও পণ্য সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণসহ নতুন সুযোগগুলোর অন্বেষণ করছি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ এসেছে পোশাক খাত থেকে। তাই পোশাক খাত ভালো করলে রপ্তানি আয়ও হৃষ্টপুষ্ট হয়।
আনন্দবাজার/শহক