শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরে মঙ্গা জয়ের হাসি

উত্তরে মঙ্গা জয়ের হাসি
  • কার্তিকে আগাম ধান কাটার ধুম
  • তিনগুণ বেশি মজুরিতেও শ্রমিক সংকট

লালমনিরহাটে কয়েক দফায় বন্যা, ভারি বর্ষণ ও সিত্রাংসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জেলার পাঁচ উপজেলায় কার্তিকে আগাম আমন ধান ঘরে তুলতে পারায় মহা খুশি প্রান্তিক চাষিরা।

ধানের ভালো ফলন ও দামে ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিয়ে প্রান্তিক চাষিরা। চালসহ সব দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে যখন নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে তখনই কার্তিকের আগাম ধান কৃষকের মুখে মঙ্গা জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

এক সময় এ কার্তিক মাসে লালমনিরহাটের ঘরে ঘরে হানা দিত মঙ্গার ভয়াল থাবা। তবে, কালের বির্বতনে সব কিছুই যেন পাল্টে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালমনিরহাটে তিন উপজেলায় আগাম ধানকাটা ও মাড়াই চলছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও ধান কাটতে দেখা গেছে। এদিকে ধানকাটা ও মাড়াইয়ে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ কার্তিক মাসে ধান পেয়ে অনেক কৃষকের মঙ্গা দূর হয়েছে।

চলতি মাসেই লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এসব ধানকাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ায় কৃষকদের মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক।

ধানের দাম ভালো থাকায় চাষিদের মনও উৎফুল্ল। অপরদিকে মজুরি বেশি থাকায় কৃষি শ্রমিকরা রয়েছেন চাঙা। ধানকাটা ও মাড়াই করতে কৃষি শ্রমিক পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দিন হাজিরায় ৩ থেকে ৫শ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলায় ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৩ মেট্রিক টন চাল। এর মধ্যে আগাম জাতসহ হাইব্রিড চাষ হয়েছে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে যা মোট আবাদি জমির ৪৩ শতাংশে।

আরও পড়ুনঃ  একদিনে আক্রান্ত ৩৪৮০ মৃত্যু ৩৮

বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার  টাকা দরে। কৃষকরা জানান, এবার সারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের মাঝেও ধান চাষ করেছি। আশা করি ধানের ভালো মূল্য পাবো। গত বছর এক বিঘা জমির ধানকাটা ও মাড়াই করতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাগত। এবার প্রায় তিনগুণ বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে তবুও শ্রমিক সংকট।

হাতীবান্ধা উপজেলার ফকির পাড়া ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমির ধানকাটা মাড়াই শেষ হয়েছে। আগাম ধান পেয়ে এ কার্তিক মাসে মঙ্গা দূর হয়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা জগতবের ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন সুমন বলেন, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ধানের ফলন বাম্পার হয়েছেন। ধানের ভালো ফলন ও ধানের দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি।

লালমনিরহাট জেলা সদর, আদিতমারি, কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে। ধানকাটার পর জমিতে ভুট্টার বীজ বপনের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। গতবার ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় ভুট্টা চাষে বেশি ঝুকছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রচুর জমিতে চাষবাদ হয়েছে। ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও তেমন ক্ষতি হয়নি। কার্তিক মাসে আগাম ধান পেয়ে কৃষকরা অনেক খুশি। তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় পোকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন