বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমার পর ফের বাড়ছে

কমার পর ফের বাড়ছে

দাম ১০০ ডলার ছুঁইছুঁই

তেলের বিশ্ববাজার

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কায় গত দেড় মাসে তেলের দাম কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সেই তেলের দাম প্রায় ১০০ ডলারে পৌঁছেছে। এই দর গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যে কোনো মুহূর্তে তেলের ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেকরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩ ডলার ৭১ সেন্ট বা ৪ শতাংশ বেড়ে ৯৮ ডলার ১৩ সেন্টে উঠেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯২ ডলার ৫০ সেন্ট; এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৪ ডলার ৫৮ সেন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। সপ্তাহ খানেক আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৬ ডলার ৩৯ সেন্ট এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৭৯ ডলার ১২ সেন্টে নেমে এসেছিল। যা ছিল গত জানুয়ারির পর সবচেয়ে কম।

যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও গত বুধবার অপরিশোধিত তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দেয় শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জোটের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তেলের বাজারে নিজেদের আধিপত্য ও দাম ধরে রাখতে ওপেক প্লাস এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

আরও পড়ুনঃ  একদিনে রের্কড সংখ্যক মৃত্যু ৪০, নতুন আক্রান্ত ২৫৪৫

অপরিশোধিত তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছিল ওপেক প্লাসের সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা বারবার উৎপাদন না কমাতে অনুরোধ জানিয়েছে। তাতে মত পাল্টায়নি ওপেক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও এই সংস্থার অন্যতম সদস্য এখন রাশিয়া। বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত মার্চ থেকে রাশিয়ার তেল নেওয়া কমিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা জোট। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর ইইউর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ফলে প্রয়োজন মেটাতে এখন মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেল কেনার পথে হাঁটছে ইউরোপ। এতে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়েছে ভারতসহ এশীয় দেশগুলো। এ জন্যই মেয়াদি চুক্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে তেল কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত।

অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক আমেরিকান কোম্পানি পিভিএম ওয়েল অ্যাসোসিয়েটসের বাজার বিশ্লেষক তামাস ভার্গা বলেন, ওপেক তেল উপাদন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণায় হঠাৎ করেই তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। যে কোনো মুহূর্তে দর আবার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে গত শুক্রবার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে আপাতত আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

আরও পড়ুনঃ  ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে ১০ মাসে দেশে পাঠিয়েছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার: অর্থমন্ত্রী

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল। গত মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এর পর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে’তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়। এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন