শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় স্বপ্নের বন্ড বাজার

বড় স্বপ্নের বন্ড বাজার

উন্নয়ন হলে সবাই বন্ড থেকে টাকা তুলবেন

বন্ড মার্কেটকে যদি উন্নয়ন করতে পারি, ভালো করতে পারি তাহলে সবাই বন্ড মার্কেটে যাবে। সেখান থেকে টাকা তুলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুল রউফ তালুকদার। পাশাপাশি বলেন, রেগুলেটর হিসেবে আমাদের কাজই হবে পুঁজিবাজারকে সহায়তা করা। ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২ ‘ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ চলবে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। বিশ্ব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) সদস্য লাভ করার পর বাংলাদেশ ২০১৭ সাল থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করে আসছে।”

আব্দুল রউফ তালুকদার বলেন, পুঁজিবাজারের দুই পার্ট। একটা হলো ইক্যুইটি বাজার। অপরটি ডেপথ বাজার। ইক্যুইটি বাজার হলো পুঁজিবাজার। বাংলাদেশে এই বাজার উন্নয়ন করেছে। পুঁজিবাজারের আরেকটা অংশ যেটা আসলে বড় হওয়া উচিত, সেটা হলো বন্ড বাজার। সেটা কিন্তু খুব বেশি গড়ে উঠেনি। সেটার সেকেন্ডারি বাজারে আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। বন্ড বাজারকে বড় করতে যে সাপোর্ট দরকার সেটা গভর্নর হওয়ার পর বেশি অনুভব করলাম।

ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়শিয়াতে উদ্যোক্তা পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি তুলে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। আর আমদের দেশে হচ্ছে ঠিক উল্টো। সবাই ব্যাংক থেকেই লোন নিচ্ছে। কাজেই এখনে যদি লোন পরিশোধে কোয়ার্টার মিস করেন তাহলেই তিনি ডিফল্ডার হয়ে যাচ্ছেন। কাজেই আমি মনে করে বন্ড বাজারকে যদি উন্নয়ন করতে পারি। আরো ভালো করতে পারি তাহলে সবাই বন্ড মার্কেটে যাবে। সেখান থেকে তারা টাকা তুলবে। আর ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে।

আরও পড়ুনঃ  শিল্পকারখানার বর্জ্যে দূষিত বানার নদ

বন্ড প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, আমাদের অনেক ব্যাংক টায়ার-২ বন্ড ইস্যু করছে। সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড এবং আমি জয়েন্ট করার আগ পর্যন্ত ট্রেন্ড ছিল এক ব্যাংক বন্ড ইস্যু করতে আর আরেক ব্যাংককে নিতে হতো। আমি জয়েন্ট করার পর ফিফটি করে দিয়েছি। ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড তাকে বাইরে বিক্রি করতে হবে। ব্যাংকের বন্ড তো সব সিকিউরড বন্ড। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ফল্ট করেনি। আগামী ৫০ বছরেও ফল্ট করবে না। তাহলে সব তো সিকিউরড বন্ড। তারা কেন বাজারে আসবে না। সেটা কেন সাধারণ লোক কিনবে না।

আব্দুল রউফ তালুকদার বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ ব্যাংক এসেছে। সবাইকে বাধ্যতামূল করে দিয়েছি যে ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড পুঁজিবাজারে ইস্যু করতে হবে। আমরা পুঁজিবাজারে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি। আরেকা বিষয় হলো সরকারি যে ট্রেজারি বন্ড আছে এগুলো সেকেন্টারি বাজারে ট্রেড করার অটোমেটিক সিস্টেম ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়ে গেছে। মগ ট্রাইলও হয়েছে এবং এটা খুব ভালো কাজ করেছে। সুতারাং আমরা এটা খুব শিগগিরই শুরু করতে পারবো। শুধু সরকারের আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে।

বন্ড বাজার বিকাশে আরেকটা বড় সমস্যা ছিল সঞ্চয়পত্র উল্লেখ করে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সঞ্চয়পত্রে খুব হাই ইন্টারেস্ট ছিল। এ কারণে বিনিয়োগের একটা বিরাট অংশ সঞ্চয়পত্রে ঢুকে যেত। এর মাধ্যমে গরিবের টাকা আমরা বড় লোকদের দিয়ে দিতাম। আমি অর্থ সচিবের দায়িত্ব নিয়ে সঞ্চয়পত্র যাতে একজন লোক ৫০ লাখের বেশি না কিনতে পারে সেই আইন করেছি। এখন কোনো ব্যাংকে ৫০ লাখের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। আমরা চাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করুক।

আরও পড়ুনঃ  চালের দাম বৃদ্ধিতে কারসাজি রয়েছে মিল মালিকদের : খাদ্যমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, কাঁচাবাজারকে এখন আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসি। কাঁচাবাজারে যারা আলু পটল বিক্রি করে, তরিতরকারি বিক্রি করে অথবা আরো ছোট খাটো ব্যবসা করে তারা কিন্তু সেই একসময় পুঁজিবাজারে চলে আসে। এটা আমাদের জন্য বিশাল পজেটিভ দিক ছিলো। শুধু যারা বাজার করে তারা নয় যারা গৃহবধূ তারা এসেছে, অফিসে যারা কর্মচারি ছিলো তারা এসেছে। দাড়োয়ান থেকে শুরু করে যারা আছে সবাই এসেছে। সারাদেশে একটা সুন্দর সাজসাজ রব উঠেছে।

সবাই পুঁজিবাজারে ব্যবসা করছে আর রাতারাতি টাকা পয়সার মালিক হচ্ছে, খুব ভালো একটা জিনিস। কিন্তু হঠাৎ করে ফুস হয়ে গেলো। ১৯৯৬ সাল মনে আছে, তার কিছুদিন পর ২০১০ সাল। আমার মনে হয় খুঁজে বের করা দরকার যে বাজারে পুঁজি বেচাকেনা করে সে বাজারটা কেন, কারা বাজারে আসবে কে বিক্রি করবে, কেন বিক্রি করবে। এসবগুলোর উত্তর যদি খুঁজে বেরাই। তাহলে আমাদের একটি সুন্দর  পুঁজিবাজারের সৃষ্টি হবে। এবং  পুঁজিবাজারের যে অতীতের ইতিহাস সেগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া খুব জরুরি। সেখানে কোথায় গলদ ছিল, সে গলদগুলো আমাদের বের করা এবং সে গলককে আমরা যদি ঠিক মতো চিহিৃত করতে পারে তাহলে পুঁজিবাজার ভালো হবে।

পুঁজিবাজারের মূল বিষয় হলো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস, যা অর্জন করা খুব জরুরি জানিয়ে শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, ঘর পোড়া গরু সিদুর দেখলে ভয় পায়। আর চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও মানুষ ভয় পায়। এটি আমাদের বাস্তব সত্য চিরন্তন বিষয়। সেই ১৯৯৬ আর ২০১০ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানুষজনের আস্থা ও বিশ্বাস এখান থেকে চলে গেছে। যেভাসে সকল লোক এখানে ধাবিত হয়েছিল, মানুষ এসছিলো। এখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাদের ফেরাতে হলে আমাদের চিন্তা করতে হবে। বিএসইসিকে কাজ করতে হবে এবং তারা সে কাজ করছে।

আরও পড়ুনঃ  দেশে চিকিৎসকের ১১ হাজার ৩৬৪ পদ ফাঁকা

পুঁজিবাজার আর ১৯৯৬ কিংবা ২০১০ সালে ফিরবে না জানিয়ে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন,  এখন আমরা পুঁজিবাজারের ভালো দিন দেখতে পাবো।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমরা সবাই যদি একসাথে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে অর্থনীতিটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তখনই এ অর্থনীতির অন্য অংশগুলো স্বস্তি পাবে। ব্যবসায়ীদের ভালো করে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের স্বস্তির সাথে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যাতে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ভালো করলে বিদেশি ব্যবসায়ীরা ইপিজেড এবং ইকোনোমি জোনে ব্যবসা করতে আসতে পারবে। পুঁজিবাজার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সকলেই একসাথে কাজ করে আমরা যদি অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তবে দেশ উপকৃত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন