ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাছ সংকটের জন্য বিপাকে শুঁটকি উৎপাদনকারীরা

বেশ কয়েক বছর যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে বৃহত্তর চলনবিলের উৎপাদিত শুঁটকি মাছ। এতে করে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার অবদান রেখেছে এই শুঁটকি মাছ।

এছাড়াও উৎপাদিত এসব শুঁটকি মাছ বিপণনসহ কর্মযজ্ঞে লিপ্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই অঞ্চলে অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে ভোজনরসিকদের কাছে চলনবিলের এই শুঁটকি মাছ এখনও রয়েছে স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয়।

অথচ এ বছর ভরা মৌসুমেও মাছের তীব্র সংকট, সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় চলনবিলের শুঁটকি মাছ উৎপাদনকারীরা রয়েছেন চরম বিপাকে। এছাড়াও শুঁটকির বাজারজাতকরণের ভালো ব্যবস্থা না থাকার জন্যও উৎপাদন কমে গেছে। তবে যেটুকু উৎপাদিত হচ্ছে তা বাজারজাত করতে সমস্যা না হলেও ঠিকঠাক মতো দাম পাচ্ছেন না তারা। এ কারণে তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না।

শুঁটকি মাছ উৎপাদনকারী ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, উৎপাদিত শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ও প্রক্রিয়াজাতের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রতি বছর এ অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়। কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করে শুধু লবণ মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে এসব শুঁটকি। আর এ জন্যই শুঁটকি বেশি দিন ঘরে ফেলে রাখাও যাচ্ছে না। তাই এ অঞ্চলের শুঁটকিশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে হিমাগার তৈরির পাশাপাশি শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক ব্যাবস্থা করতে হবে বলে জোরদার দাবি জানান তারা।

গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সিংড়ার নিংগইন এলাকার শুঁটকিপল্লি গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি শুঁটকির চাতাল। চিংড়ি, টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ ইত্যাদি মাছ সারি-সারি করে বাঁশের বাতার চালায় বিছিয়ে রাখা হয়েছে। আর চালার পাশে বস্তায় বস্তায় রয়েছে শুঁটকি মাছ। যেখানে নারী-পুরুষরা চাতালে শুঁটকি পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন।

শেরকোল ইউনিয়নের শুঁটকি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানায়, শুঁটকি মাছ উৎপাদনের সাথে যারা জড়িত আছে তাদের কারও মুখে হাসি নেই। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এখানে শুধু কাদেই পাওয়া যায় কোন মাছ নেই। অল্প কিছু পুঁটি মাছ পাওয়া গেলেও এর দাম চড়া।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে খলইয়ে শুধুমাত্র কেজি দশেক পুঁটি উঠে ছিল। তা লবণ মেখে দুই দিন পর প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন চলনবিলে মাছের সংকট রয়েছে। গত কয়েক বছর আগেও প্রতিটি বিল থেকে শোল, টাকি, বোয়াল, টেংরা, পুঁটি, চান্দাসহ বিভিন্ন মাছ সংগ্রহ করা হতো। তখন দিনরাত চাতালে ব্যস্ত থাকতে হতো। কিন্তু এবার মাছ নেই তাই শুঁটকি উৎপাদন কমে গেছে।

তিনি বলেন, মাছের আকালের জন্য এখন শুঁটকি তৈরিতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। মাছ বেশি বা কম হোক কিন্তু শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরিই দিতে হয়। এ সব মিলিয়ে শুঁটকি উৎপাদনে খুব একটা লাভ হচ্ছে না আমাদের ।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, চলনবিলের সিংড়াসহ বিভিন্ন স্থানে জুড়ে অন্তত দেড় শতাধিক স্থানে শুঁটকি চাতাল আছে। মৌসুম এলে মাছ সংগ্রহ করে এসব চাতালে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এখানকার শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানসহ অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়।

তিনি বলেন, এখানকার শুঁটকির গুণগত মানও ভালো ও চাহিদা সম্পন্ন। এ শিল্পের বিকাশে প্রক্রিয়াজাত, বাজারজাতকরণে ব্যবস্থাগ্রহণ প্রয়োজন। ইতিমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, সিংড়ার কৃষি ও মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এতে করে মাছ সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা ও অবকাঠামোগত বিশেষ সুবিধা বিদ্যমান থাকবে। এটি পুরোপুরি ভাবে বাস্তবায়িত হলে শুঁটকিসহ মৎস্যকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বিপ্লব সূচিত হবে।

আনন্দবাজার/এম.কে

সংবাদটি শেয়ার করুন