শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টপটেনের দখলে ৪১ ভাগ লেনদেন

বীমার টানে উত্থানে পুঁজিবাজার
  • লেনদেন কমেছে, সূচকেও পতন
  • মূলধন কমেছে ২৫৩৭ কোটি টাকা
  • লেনদেন সেরা বেক্সিমকো
  • পিই রেশিও ১৪.৭১ পয়েন্ট

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় কমেছে। সপ্তাহটিতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। এসময় হাউজগুলোতে ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ের চাপ বেশি ছিল। গেল সপ্তাহে পতন হয়েছে সব ধরনের সূচকের। ডিএসই মূলধন পরিমাণও কমেছে।

গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৪১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। মোট লেনদেন করে ২ হাজার ৯৪৪ কোটি ৫৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেক্সিমকো একাই মোট শেয়ারের ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ লেনদেন করে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটসহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। এর কারণে বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে।

আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার ছোট হয়ে আসে। অবশ্য পরের সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরে এসেছিল। এরপর উত্থান-পতনের মধ্যে কাঁটে পুঁজিবাজার। এরই ধারায় গেল সপ্তাহে লেনদেন ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমছে। সূচক সহ মূলধন পরিমানও কমেছে।

ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯ হাজার ৯১ কোটি ২২ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৯৬টির, দর কমেছে ১৮৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১০৯টির কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৭টি কোম্পানির শেয়ার।

আরও পড়ুনঃ  করোনা শনাক্ততে বাংলাদেশের যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন

আরও জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ২০ হাজার ১২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহ বা গত ৮ সেপ্টেম্বর মূলধন ছিল  ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন কমেছে ২ হাজার ৫৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫১৫ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ৩৪৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪২৯ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে।

গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। ‘এন’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ এবং বি ক্যাটাগরি ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৪১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ লেনদেন করেছে। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা (এ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, জেএমআই হসপিটাল (এন ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, লার্ফাজ-হোল্ডসিম (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, শাইনপুকুর  (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৬২ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৬০ শতাংশ, নাহি এ্যালুমিনিয়াম (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ১৪ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন (এ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিং (এ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং মালেক স্পিনিং (এ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৫৫ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ৭ পৌরসভায় শুরু হয়েছে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

এদিকে “গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৭১ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ১৫ পয়েন্ট।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭১ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ থেকে বাড়লেও পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন